সিলেটসহ ৩ সিটিতে চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগ

7

 

কাজির বাজার ডেস্ক

আসন্ন ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনটিতে চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে আওয়ামী লীগ। এই তিন সিটিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিরোধী প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারেন। অন্য দুই সিটিতে দলীয় প্রার্থীরা সহজে বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটির নেতারা মনে করছেন গাজীপুর, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের। কারণ এখানে দলের বিদ্রোহীদের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোর ছায়া প্রার্থী থাকতে পারে। এ তিন সিটিতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও দীর্ঘদিনের।
অন্যদিকে খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অনেকটাই নির্ভার নেতারা। এ দুই সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়রদের আবারো দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বর্তমান সিটি করপোরেশন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জমান লিটনকে এবং খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেককে। অন্যদিকে চালেঞ্জ মনে করা গাজীপুরে সাময়িক বরখাস্ত বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র আজমত উল্লাহ খান। বরিশালে চাচা-ভাতিজার মনোনয়ন লড়াইয়ে দলের সমর্থন পেয়েছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহ এবার মনোনয়ন পাননি।
করোনা মহামারির সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহম্মেদ কামরান মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ছিলেন। এবার প্রার্থী করা হয়েছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ভোট করার আগ্রহ দেখিয়ে কয়েক মাস ধরে দৌড়ঝাঁপ করেন তিনি। এ ছাড়া স্থানীয় আরও কয়েকজন নেতাও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন ২৫শে মে, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন ১২ই জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২১শে জুন অনুষ্ঠিত হবে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে আছেন। সেখান থেকে ফিরলেই দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিশেষ বৈঠক করবেন। ৫ সিটি এলাকার সাংগঠনিক অবস্থা তাদের কাছে জানবেন। ওই বৈঠকে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো ওই বৈঠকে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানানো হয়।
দলের নেতারা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি বিদায়ী মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। সঙ্গে মায়ের জন্যও মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
এতে অনেকটা স্পষ্ট জাহাঙ্গীর নিজে কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলেও মাকে নিয়ে তিনি মাঠে থাকতে পারবেন। ফলে এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এ সিটিতে বিএনপি’র কোনো প্রার্থী নেই। দলটি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দল ঘরানার সরকার শাহনুর ইসলাম মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। যদিও তিনি বিএনপি’র কোনো পদ-পদবিধারী নয়। ধারণা করা হচ্ছে নির্বাচনী মাঠে থাকলে তিনি বিরোধীদের ভোট টানতে পারেন। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। দলীয় নেতাদের ধারণা, জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনে না থাকলেও তার কর্মী-সমর্থকরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে চাইবেন না।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান বিএনপি’র প্রার্থী এমএ মান্নানের কাছে হেরে যান। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লাহর হেরে যাওয়ার পেছনে জাহাঙ্গীরের ভ‚মিকা ছিল বলে অনেকে ধারণা করছেন।
দলীয় নেতারা জানান, প্রায় একই চিত্র বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও। মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করার কারণে বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হয়েছে। ওই বলয়কে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করানোটা দুরূহ বিষয়। যেহেতু নির্বাচনের আরও কিছুটা সময় আছে সেহেতু কিছুটা ধীরগতিতে ওই দুই সিটি করপোরেশন নিয়ে পদক্ষেপ নিতে চায় আওয়ামী লীগ। তার আগে দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা দুই সিটিতে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেবেন।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার অন্যরকম চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
তারা বলেন, সিলেটে আওয়ামী লীগকে জিততে হলে অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটিয়ে দলকে আনোয়ারুজ্জামানের পেছনে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এ সিটির সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন করবেন কিনা এখনো স্পষ্ট নয়। বিএনপি’র অন্য কেউ নির্বাচন করছেন না। তবে এখানে আওয়ামী লীগের বিপরীতে অন্য যেকোনো প্রার্থী চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেন। কারণ এখানে বিরোধী ভোট এবং আওয়ামী লীগের একাংশের ভোটও যুক্ত হবে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর বাক্সে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচন মানেই হলো উৎসব ও চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় একটি দল। এখানে সবকিছু হিসাব-নিকাষ করে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়। এটা করতে গিয়ে অনেক কিছু যাচাই-বাছাই করা হয়। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দলটিতে নেতৃত্বের দারুণ বিকাশ হয়েছে। নতুন প্রজন্ম এসেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে দলীয় কোন্দলের কথা শোনা গেলেও নির্বাচনের সময় ঠিকই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এর ব্যত্যয় হবে না বলে আমরা মনে করি।