ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজ

12

সিন্টু রঞ্জন চন্দ

সিলেটের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমে আসলেও নতুন করে বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। এছাড়া বাজারে সব ধরনের সবজির আমদানী থাকলেও দাম উর্ধ্বমুখী। পাশাপাশি একই সময় বেড়ে যাওয় মাছ, গরুর মাংস ও চিনির দাম এখনো কমেনি। শনিবার সিলেট মহানগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এখন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ টাকা দরে। কয়েক দফা বেড়ে আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম নতুন করে বেড়ে গেছে। গতকাল সিলেট নগরীতে প্রতি কেজি বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।
আলুর দাম বাড়া সম্পর্কে সিলেট নগরীর ব্রক্ষময়ি বাজারের আলু ব্যবসায়ী মুরাদ আহমদ জানান, রাশিয়ায় আলু চলে যাওয়ায় কয়েক দফা আলুর দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া পাইকারী আড়ৎদাররা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বৃদ্ধি করছেন। ফলে আমাদের প্রফিট বেশী যুক্ত হওয়ায় ভোক্তারা আলু কিনছেন কম। তাই ঈদের পরবর্তী সময়ে ব্যবসা হচ্ছে কম।
এদিকে ঈদের এক সপ্তাহ আগে গরুর মাংসের দাম সাড়ে ৭০০ থেকে বেড়ে ৮০০ টাকায় ঠেকেছে। এখন চাহিদা কমলেও কমেনি দাম। বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। অন্যদিকে ঈদের আগে থেকে চলমান চিনির সংকট এখনো কাটেনি। চাহিদা স্বাভাবিক হয়ে এলেও এখনো সরকার নির্ধারিত থেকে বেশি দামেও কিনতে হচ্ছে পণ্যটি। যেসব দোকানে খোলা চিনি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।
যদিও ৬ এপ্রিল সরকার প্যাকেট চিনির কেজি ১০৯ টাকা, আর খোলা চিনির কেজি ১০৪ টাকা ঠিক করে দিয়েছিল। দাম প্রসঙ্গে খুচরা দোকানিরা জানিয়েছেন, ঈদের আগ থেকে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন পরিবেশকরা। এখন (ঈদের পর) অন্যান্য পণ্যের অর্ডার নিলেও চিনির কোনো খবর জানাচ্ছেন না। বেশির ভাগ দোকানে যে চিনি বিক্রি হচ্ছে তা ঈদের আগে কেনা। আবার চিনি কিনতে হলে দোকানদারকে বাধ্যতামূলক আরও কয়েকটি পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন পরিবেশকরা এমনটিও জানিয়েছেন কয়েকটি বাজারের কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা।
অন্যদিকে ঈদের পরে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এ পেঁয়াজ রজমানে ছিলো ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা। আর আলুর দাম কয়েক দফা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে এখন ৩৫ টাকা।
নগরীর বন্দরবাজারস্থ লালবাজারের ইত্যাদি পোল্ট্রি দোকানী শফিক মিয়া জানান, কাচামাল হওয়ায় দর উঠানামা করছে। গতকাল ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ টাকা। আর লাল মুরগি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা, সোনালী মুরগি সাইজ বুঝে ২২০-৩৩০ টাকা ও কক প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায়।
এদিকে আমদানী থাকলেও সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। নগরীর ব্রক্ষময়ি বাজারের নজরুল বাদ্রার্সের মালিক নজরুল ইসলাম জানান, বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, কাঁচা আম ৪০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, কাকরোল ১০০ টাকা, সজনে ডাটা (আঁটি) ৫০-৬০ টাকা, মিষ্টি আলু ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, করোলা ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০-৫০ টাকা, তাল বেগুন ৫০-৬০ টাকা। চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৪০-৫০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, সীম ১২০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, চাল কুমড়া (পিস) ৫০-৬০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া এক টুকরা ৩০ টাকা, ফুলকপি (পিস) ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা, লাউ (পিস) ৭০, কাঁচা কলা (হালি) ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল লালদিঘী বাজারে প্রতি কেজি দেশী বোয়াল মাছ ৬০০ টাকা ও ইন্ডিয়ান বোয়াল প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা, পাবদা ৩০০-৩৫০ টাকা, টেংড়া ৫০০-৬০০ টাকা, দেশি কই ১০০০ টাকা, ফিশারী কই ২৩০-২৫০, মাগুর ৫০০ টাকা, শিং ৩০০-৩৫০ টাকা, রুই ২৬০-৩৫০ টাকা, কাতল ৩৫০-৪০০ টাকা, রূপচাঁদা ১৪০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৭০০-৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১০০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, ইলিশ ৭০০-২০০০ টাকা, কারফু ২৮০-৩০০ টাকা, ব্রিকেট ২২০-৩২০ টাকা, পাংগাস ১৬০-২৬০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০-৩৫০ টাকা, মিরগা ১৬০-২৫০ টাকা ও কাচকি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সিলেট নগরীর বঙ্গবন্ধু বাজার লালদিঘীর পাড়ের মৎস্য ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন, বাদশা, মিয়া, সুয়েব আহমদ, সোহেল আহমদ, তারেক, আলামিন ও মনির হোসেন জানান, বাজারে এখন ফিশারী মাছ বেশী। দেশীয় প্রজাপতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তারা রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সাতক্ষিরা জেলা থেকে ফিশারী মাছ এখানে এনে বিক্রি করছেন। এছাড়া এখানে সামুদ্রিক মাছও নিয়ে এসে এ বাজারে বিক্রি করা হয়। তারা জানান, আমদানী কম থাকায় মাছের দাম বেশী।