নগরীতে ছিনতাইকারীরা সক্রিয়, গ্রেফতার ৯

8

সিন্টু রঞ্জন চন্দ

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সিলেট নগরীতে সক্রিয় হয়ে উঠছে চোর-ছিনতাইকারীরা। দিনে-রাতে চলাচলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জায়গায় কেউ না কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন, খোয়াচ্ছেন সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার কিংবা টাকা-পয়সা। বাধা দিলেই ছিনতাইকারীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অনেকে হচ্ছেন আহত।
সূত্র জানায়, ছিনতাইয়ের শিকারদের মধ্যে বড় একটি অংশই দেশের নানা স্থান থেকে বিভিন্ন যানবাহনে আসা যাত্রী। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো ভোরের দিকে নগরীতে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। বাসস্ট্যান্ড থেকে তারা নির্দিষ্ট গন্তব্য বাসা-বাড়িতে যাওয়ার পথে বিভিন্ন সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সম্মুখীন হন। এছাড়া রাত এবং ভোরে মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় চলাচলের সময় অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হন। এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতরা গ্রেফতার হলেও আড়ালে থাকা তাদের গডফাদাররা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার অনেকেই ছিতনাইয়ের শিকার হয়েও মামলা-মোকদ্দমার ঝামেলা এড়াতে থানায় যেতে চান না।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার নগরীর আখালিয়ায় তারাবির নামাজের সময় দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। জানালার গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকে চোরেরা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে। তারাবির নামাজের সময় আখালিয়া বড়বাড়ি চান্দিআলা ২৬/১ নম্বর বাসায় চুরির এ ঘটনা ঘটে।
বাসার মালিক জালালাবাদ গ্যাসের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মাহবুবুল হাসান মাহী জানান, তার বাবা ও মা ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। তিনি বাসায় একা থাকেন। বৃহস্পতিবার তারাবির নামাজ পড়তে তিনি মসজিদে যান। ফিরে এসে দেখেন জানালার গ্রিল কেটে চোর বাসায় ঢুকে নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে। স্বর্ণালঙ্কারগুলো তার বোনের ছিল। বোন পাঠানটুলাস্থ স্বামীর বাসায় থাকেন। মাহী জানান, চোরেরা প্রথমে বাসার সিসি ক্যামেরার লাইন কেটে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। পরে গ্রিল কেটে বাসায় প্রবেশ করে। বাসার আলমিরাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র তছনছ করে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এসএমপি পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে নগরীর কুমারপাড়া ও লামাবাজার এলাকায় চুরি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনায় চাকুসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- এয়ারপোর্ট থানার লাকাউড়া এলাকার মৃত খলিল মিয়ার ছেলে মো. জালাল উদ্দিন (২৮), চুনারুঘাট উপজেলার বদরগাজী গ্রামের (বর্তমানে- খাসদবীর) আব্দুল হানিফের ছেলে শরীফ আহমদ (৩০), সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের (বর্তমানে- শ্রাবনী জামে মসজিদের পাশে, পাঠানটুলা) আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন (৩২) ও লামাপাড়া এলাকার ইসলাম উদ্দিনের ছেলে মো. আসলাম আহমদ।
জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক শামীম উদ্দিন, এএইচএম রাশেদ ফজল ও কাজী রিপন সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করে। আটককৃত আসামিদের স্থায়ী কোনো পেশা নাই। পুলিশ জানায় তারা সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করে চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাÐ করে আসছে বলে জনশ্রæতি রয়েছে।
এদিকে একইদিন বৃহস্পতিবার ৩০ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্ত¡রস্থ গ্রীণ লাইন বাস কাউন্টার সংলগ্ন এলাকা থেকে ৪ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তারা ছিনতাইয়ের চেষ্টায় ছিলেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিলেট নগরীর শাহপরাণ থানার টিকরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান (৪৫), খাদিমপাড়া গ্রামের মোঃ ইদ্রিছ আলী (৩৫), শিবগঞ্জ সোনারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সায়মন (২২) ও পীরেরবাজার বলাকা আবাসিক এলাকার ফারহান আহমদ (২৪)। তাদের কাছ থেকে দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর শুক্রবার ৩১ মার্চ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
অপরদিকে, গত ২৪ মার্চ রাত পৌনে ১০ টার দিকে গোপন সংবাদ ভিত্তিতে দক্ষিণ সুরমা থানার রেল গেইটস্থ রসমেলা নামীয় মিষ্টির দোকানের সামন থেকে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে ছিনতাইকারী রাজু আহমদ উরফে ঝাড়ু মিয়া (২৩) নামে একজনকে গ্রেফতার করে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ছিনতাইকারী রাজু আহমদ চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার আহমদনগর গ্রামের মৃত তাজু মিয়ার পুত্র। বর্তমানে সে দক্ষিণ সুরমা বারখলা, আহাদ মিয়ার কলোনীর বাসিন্দা।
পুলিশ এসময় ছিনতাইকারী রাজুর দেহ তল্লাশী করে ১টি স্টিলের টিপ চাকু উদ্ধার করে জব্দ করেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃত আসামী রাজু আহমদ উরফে ঝাড়ু মিয়ার বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় ছিনতাই ও মাদক মামলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার রাতে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) সুদীপ দাস বলেন, চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধে মহানগরীতে বাড়তি পুলিশ ও টহলরত পুলিশের পাশাপাশি প্রতিরাতে একজন করে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা টহলে থাকবেন। এছাড়া রাতে চলাচল নির্বিঘœ করতে এবং চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঠেকাতে কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, রমজানের মাঝামাঝি থেকে নগরীতে চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে সাদা পোষাকদারী পুলিশের পাশাপাশি সব ধরনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে হাট-বাজার ও বিপণী বিতানগুলো।