পাকিস্তানি শাসকদের নতুন সামরিক ফরমান

11

কাজিরবাজার ডেস্ক

একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে যত দিন গড়াচ্ছিল, স্বাধীনতাকামী বাঙালির ঐক্য ততই মজবুত হচ্ছিল; মার্চের ত্রয়োদশ দিনেও সরকারি, আধা-সরকারি অফিস-আদালতে অনুপস্থিত থাকলেন কর্মীরা। এ পরিস্থিতিতে ১৩ মার্চ ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন সরকার সামরিক ফরমান জারি করে ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। নির্দেশে বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে কর্মীদের চাকরিচ্যুত ও পলাতক ঘোষণা করে সামরিক আদালতে বিচার করা হবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদÐ হবে।
ওই নির্দেশ জারির পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিবৃতি দিয়ে এ ধরনের উসকানিমূলক কার্যকলাপ বন্ধের আহŸান জানান।
তিনি বলেন, যখন আমরা সামরিক শাসন প্রত্যাহারের জন্য বাংলার জনগণের প্রচÐ দাবির কথা ঘোষণা করছি, ঠিক তখন নতুন করে এ ধরনের সামরিক নির্দেশ জারি জনসাধারণকে উসকানি দেয়ার শামিল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী এদিনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী কাজ চলে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাসভবন, যানবাহনে ওড়ে কালো পতাকা।
প্রতিদিনের মত এদিনও ঢাকাসহ বড় শহরগুলো ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মিছিল-সমাবেশে ছিল মুখরিত। ঢাকায় ছাত্র ইউনিয়ন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণ থেকে বিশাল মশাল মিছিল বের করে।
বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মীসহ ২৬৫ জন বিদেশি নাগরিক এদিন ঢাকা ছেড়ে যান।
পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপি ও কাইয়ুমপন্থি মুসলিম লীগ ছাড়া সব বিরোধীদলের নেতারা পাকিস্তানের অনিবার্য ভাঙন রোধে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহŸান জানান।
বৈঠকে কাউন্সিল মুসলিম লীগ, কনভেনশন লীগ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, জমিয়তে ওলামায়ে পাকিস্তানের নেতারা অংশ নেন। ওয়ালী ন্যাপ আগেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল।
চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীন ও সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল হাকিম পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব ও পদক বর্জন করেন।
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ইকবাল হল (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) প্রাঙ্গণে পরিষদের সব আঞ্চলিক শাখার আহŸায়ক, সম্পাদক ও সদস্যদের সভা আহŸান করেন। বিকালে চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ লালদীঘিতে জনসভা করে। জনসভায় নেতারা সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পাকিস্তানের সঙ্গে অসহযোগ করতে আহŸান জানান। চট্টগ্রামে বেগম উমরতুল ফজলের সভাপতিত্বে নারীদের সমাবেশে বাংলাদেশের জনগণের পরিপূর্ণ মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বিলাস দ্রব্য বর্জন ও কালোব্যাজ ধারণের জন্য নারী-পুরুষ সবার প্রতি আহŸান জানানো হয়। সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য আফাজউদ্দিন ফকির এক বিবৃতিতে ‘লেটার অব অথরিটি’র মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আহŸান জানান। তিনি অবিলম্বে পূর্বাঞ্চলের প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব একজন বাঙালি জেনারেলের কাছে হস্তান্তর, বেঙ্গল রেজিমেন্টের সবকটি ব্যাটিলিয়নের পরিচালনা কর্তৃত্ব বাঙালি অফিসারদের হাতে অর্পণ এবং গত এক মাসে পূর্ব বাংলায় যে অতিরিক্ত পাকিস্তানি সৈন্য আনা হয়েছে তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানান।