গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ॥ নিজের স্ত্রী-সন্তানের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে বহন করতে পারছিলেন না ফারুক

5

স্টাফ রিপোর্টার :
গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া নিজের স্ত্রী-সন্তানের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে এগুতে পারলেন না চালক ফারুক। এ্যাম্বুলেন্স চালনা শুরুর পর থেকে বহু লাশ ও রোগী বয়ে নিয়ে অনেক জায়গায় গেছেন তিনি। কিন্তু জানতেন লাশের ‘ওজন’ এতটা হয়। থেমে গেলো তাঁর হাত। এ্যাম্বুলেন্সের সামনের রাস্তা ঝাপসা হয়ে এলো চোখের জলে। ঘটনাটি গতকাল সোমবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশকাটা ঘরের সামনে ঘটে।
সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার নয়াগ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমদ (৪৮)। প্রায় ২২ বছর ধরে এ্যাম্বুলেন্স চালান। পেশার কারণেই দীর্ঘদিন বহু লাশ ও রোগী বয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। এ নিয়ে অনেক স্মৃতি তাঁর। কিন্তু এ্যাম্বুলেন্সে নিজেই স্ত্রী ও সন্তানের লাশ তোলার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে- এমন কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। তাই স্ত্রী-সন্তানের লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সের চালকের আসনে বসেও তিনি আর এগোতে পারলেন না।
গত রবিবার ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গোলাপগঞ্জের হাজীপুর এওলাটিকর এলাকায় ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হন। তাঁদের দুজন হলেন- ফারুক আহমদের স্ত্রী রাশেদা বেগম (৩৮) ও কন্যা ফারিয়া আক্তার (১৬)। রাশেদা বেগম বিয়ানীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাবুর্চির কাজ করতেন। ফারিয়া আক্তার সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষা পাসের পর দক্ষিণ সুরমায় একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।
জানা যায়, রাশেদা বেগম চিকিৎসক দেখানোর জন্য রবিবার বিকেলে সিএনজিচালিত অটোরিক্সাযোগে সিলেটের দিকে রওনা হয়েছিলেন। সঙ্গে মেয়ে ফারিয়া আক্তার তার বই কেনার জন্য মায়ের সঙ্গে সিলেট আসতে চান। পথে ট্রাকের সঙ্গে অটোরিক্সাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে এসে ফারুক আহমদ জানতে পারেন, স্ত্রী রাশেদা বেগম দুর্ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন, আর মেয়ে গুরুতর আহত। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ফারুকের মেয়ে ফারিয়া মারা যান।
ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়- স্ত্রী ও মেয়ে হারানোর শোকে ফারুক মিয়া বাকরুদ্ধ। শোকে যেন ফারুকের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। তাঁকে সান্ত¡না দিচ্ছিলেন সহকর্মী অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা। সোমবার দুপুরে ফারুকের স্ত্রী ও মেয়ের লাশ বিয়ানীবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। ফারুকের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ফারহানা আক্তার সিলেটে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশোনা করছেন। ছোট ছেলে ফরহাদ হোসেন পড়ে নবম শ্রেণিতে। ফারুক আহমদ এক সময় অন্যের অ্যাম্বুলেন্স চালালেও বর্তমানে তাঁর দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। একটি নিজে মাঝেমধ্যে চালান, অপরটি ভাড়ায় দেন।