জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

8

পাহাড়ধসে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। আর এই ধসের অন্যতম কারণ নির্বিচারে পাহাড়ের মাটি ও গাছ কাটা। পাহাড়ের ওপর এমন অত্যাচারের কারণে জীববৈচিত্র্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। নষ্ট হয় প্রতিবেশব্যবস্থা। এ কারণে দেশে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! পাহাড়সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোয় অবাধে চলছে পাহাড় কাটা। কখনো দিনে, কখনো রাতে। পাহাড়ের মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায় কিংবা নিচু জমি ভরাটের কাজে। এর জন্য গড়ে উঠেছে নানা ধরনের চক্র। তারা সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের পাহাড়েই হানা দিচ্ছে। মাটি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। এ অবস্থায় একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে পাহাড়-টিলা কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চার সপ্তাহের মধ্যে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আবেদনটি করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
পাহাড় কাটা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়-টিলাসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোতে মাটি কাটার রীতিমতো হিড়িক পড়েছে। এক্সকাভেটর, ড্রাম ট্রাক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে চলছে পাহাড় কাটা। গড়ে উঠেছে অসংখ্য সিন্ডিকেট। অনেকের নিজস্ব বাহিনীও রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পায়। এমনকি বন বিভাগের কর্মীরাও তাদের ভয়ে তটস্থ থাকেন। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এরই মধ্যে অনেক পাহাড় সমতলভূমিতে পরিণত হয়েছে। তাহলে কি এ দেশে পাহাড়-টিলা বলে কিছু থাকবে না? পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য কি হারিয়ে যাবে?
১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দেশে পাহাড় বা টিলা কাটা নিষিদ্ধ। ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করে আরো কঠোর করা হয়েছে। কিন্তু লাভ কী, যদি আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকে। এই পাহাড়খেকোরা কি রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি শক্তিশালী? তা না হলে সংশ্লিষ্ট আইন বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না কেন? এসব নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো তাহলে কী করছে? এমন অবস্থায় উচ্চ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা মনে করি তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমাদের বিশ্বাস, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবে।
শুধু মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ নয়, সারা দেশেই পাহাড় সংরক্ষণে কঠোর নজরদারি থাকা প্রয়োজন। যেখানে পাহাড় কাটা হবে সেখানেই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।