ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা জরুরী

8

পবিত্র রমজান আসন্ন। এ সময় মুসলমানপ্রধান দেশগুলোতে পণ্যমূল্য কমতে দেখা যায়। আর বাংলাদেশে দেখা যায় উল্টোটা। এ বছর যেন তেমন পরিস্থিতি তৈরি না হয় সে জন্য সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। রমজানে বেশি প্রয়োজন হয় এমন সব পণ্যের আমদানি বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে আমদানির উদ্যোগও বেড়েছে। চিনি, ভোজ্য তেল, ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুরÑএই পাঁচটি পণ্য আমদানির জন্য যে ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে, তা বাজারে যা প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি। কিন্তু তার পরও রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ তার কিছু আলামত এরই মধ্যে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। বাজারে চিনির সংকট তৈরি করে দফায় দফায় দাম বাড়ানো হচ্ছে। মুরগি ও ডিমের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাড়ছে আদা ও অন্যান্য মসলার দাম। চীন থেকে আনা আদার কেজি ৩০০ টাকায় উঠেছে। রসুনের দামও এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে।
আমাদের বাজারে নিয়ম-নীতি খুব কমই খাটে। কোনো একটি অজুহাত পেলেই হলো। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরপরই ডিমের দাম ডজনে ৫০ টাকার মতো বেড়ে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীদের অজুহাত ছিল, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। হিসাব করে দেখা যায়, ডিজেলের দাম যেটুকু বেড়েছে তাতে এক ডজন ডিম পরিবহনে ২৫ পয়সার মতো বেশি খরচ হতে পারে। কোনো অজুহাত নেই, সিন্ডিকেট-মজুদদারির মাধ্যমেও দাম বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। তাই আমদানির সুযোগ বাড়ালেই যে রমজান মাসে দাম কম থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত বুধবার পর্যন্ত উল্লিখিত পাঁচটি পণ্যের ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু পণ্য দেশে আসতে শুরু করেছে। পণ্যগুলোর মধ্যে চিনি রয়েছে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ টন, আগের বছর একই সময়ে ঋণপত্র খোলা হয়েছিল পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টনের। সরকার এরই মধ্যে চিনির দাম বাড়িয়ে খোলা চিনি প্রতি কেজি ১০৭ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এই দামে কোথাও চিনি পাওয়া যায় না। এখনো দাম ১২০ টাকার ওপর। দোকানিদের মতে, শিগগির দাম কমার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাহলে শুধু আমদানি বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে কি? দেশে এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, কিন্তু তাতে চালের দাম কমেছে কি? কমেনি।
ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। বাজারে পণ্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য কিংবা ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণের জন্য সরকারের বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে, তাদের ভূমিকা বাড়াতে হবে। বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে। মজুদদারি, সিন্ডিকেটবাজির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। টিসিবির কর্মকা- সম্প্রসারণ করতে হবে। রেশন বা ন্যায্য মূল্যের দোকান ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা ভাবতে হবে। মোদ্দাকথা, পণ্যমূল্য যৌক্তিক রাখতে হবে।