আত্মহত্যা রোধে ব্যবস্থা

10

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশের দেড় শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আঁচল ফাউন্ডেশন যে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে, তা কোনো আশার কথা শোনাচ্ছে না। ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা : সমাধান কোন পথে’ শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশে মোট ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ে ১০৬ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৩২০ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ২১২ জন। আত্মহত্যার শীর্ষে রয়েছে নারী শিক্ষার্থী। প্রতি মাসে ৩৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
মানুষ নানা কারণে আত্মহত্যা করে বা করতে পারে। এর মধ্যে আছে বিষণœতা, ব্যক্তিত্বে সমস্যা এবং গুরুতর মানসিক রোগ। তা ছাড়া মাদকাসক্তি, অপরাধবোধ, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, দাম্পত্য কলহ, প্রেম-কলহ, অভাব-অনটন, দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা, যৌন নির্যাতন, অভিমান, পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট, প্রেমে ব্যর্থ ও প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে আত্মহত্যা করে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা সংঘটিত হয় ডিপ্রেশন বা বিষণœতার জন্য। তুচ্ছ কারণেও অনেকে আত্মহত্যায় ঝুঁকছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কাজ করতে হবে। অভিভাবক ও পরিবার এখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের বুঝতে হবে বিষয়টি। তাঁদের একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে। ভূমিকা রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া দরকার। আবার সমাজও এখানে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। চিকিৎসাক্ষেত্রে র‌্যাশনাল ইমোটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি বা সংক্ষেপে আরইবিটি নামে একটি বিশেষ থেরাপি আছে। এই থেরাপি মানসিক সংকট ও নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। হতাশা দূর করা, বিষণœতা কাটিয়ে ওঠা, আসক্তি থেকে মুক্তি, ভয় দূর করাসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে আরইবিটি।
মানসিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা যদি উন্নত থাকে, তাহলে এটি প্রতিরোধ সম্ভব। মানসিক রোগ এবং পারিবারিক ও সামাজিক নানা প্রতিক্রিয়া থেকে জন্ম নেওয়া মানসিক চাপের সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এ জন্য দরকার সচেতনতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আগে থেকে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে জীবনের এই মর্মান্তিক পরিণতি এড়ানো সম্ভব।