হবিগঞ্জে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মামলার আসামি ! লজ্জায় স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ

9

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে বয়স ১৮ বছর দেখিয়ে মারামারির অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন গ্রামের এক বাসিন্দা। ফলে পাঁচ মাস ধরে আদালতে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে ওই শিশুকে। এ নিয়ে লজ্জায় স্কুলে যেতে পারছে না শিশুটি।
শিশুটির বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায়। তার ১১ বছর বয়সী এক ফুফাতো ভাইকেও ২৮ বছর বয়স দেখিয়ে আসামি করা হয়েছে। ৪ নারীসহ এ মামলার আসামি ১৮ জন। শিশুদের বয়স বাড়িয়ে মামলা ও হয়রানির অভিযোগে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) হবিগঞ্জের আদালতে আবেদন দিয়েছেন তাদের আইনজীবী।
হবিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসাইন এ আবেদনের ওপর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন। পাশাপাশি ওই দিন মামলার বাদী ও তদন্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফজলে আলী।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফজলে আলী বলেন, হয়রানি করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও শিশুদের বয়স বাড়িয়ে এ মামলা করা হয়। আদালত নিজে যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন শিশুদের আসামি করার বিষয়টি। পাশাপাশি এ মামলায় হয়রানি করার জন্য চার নারীকেও আসামি করা হয়।
মামলার বাদী অমল ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বক্তব্য মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।
আদালতে দেওয়া অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মাধবপুর উপজেলার একটি গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী অমল ভৌমিক গত বছরের ৪ আগস্ট থানায় মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, তিনি বাকিতে মাছ না দেওয়ায় একই গ্রামের ৪ নারীসহ ১৮ জন তাকে মারধর করেন। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি করা হয় তৃতীয় শ্রেণীর আট বছর বয়সী শিশুকে। একই মামলায় ১২ নম্বর আসামি করা হয় তার ফুফাতো ভাইকে (১১)। সে গ্রামে থাকে না। কয়েক বছর ধরে ঢাকার শাহবাগ এলাকায় ফুলের দোকানে কাজ করে। তারা গত বছরের ১৮ আগস্ট থেকে জামিন পেলেও মাসে মাসে আদালতে এসে হাজিরা দিতে হচ্ছে। শিশুদের এ ভোগান্তি দেখে তাদের আইনজীবী ফজলে আলী আবেদনটি করেন।
তৃতীয় শ্রেণীর শিশুটি বলে, এখন সে লজ্জায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতি মাসে তাকে মামার সঙ্গে আদালতে আসা-যাওয়া করলেও কী কারণে যায়, সেটা সে জানে না।
শিশুটির ফুফাতো ভাই বলে, এ মামলার বিষয়ে সে কিছু জানে না। তার বাবা জামিনের আগে তাকে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। সে এখনো ঢাকায় থাকে। সেখান থেকে প্রতি মাসে আদালতে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।
শিশুদের সঙ্গে আসা অভিভাবক বলেন, হয়রানি করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে এই সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে। বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও হয়রানির শিকার হচ্ছে। তারা এ থেকে মুক্তি চান।