সোবহানীঘাটে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অভিযান ॥ জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী চাই মেয়র আরিফ

10

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর সোবহানীঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে সিটি করপোরেশন (সিসিক)। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে এই অভিযান শুরু হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীর প্রধান কয়েকটি সমস্যার একটি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। সামনের বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা যাতে না হয়, সেজন্য এখন থেকেই ছড়া-খাল উদ্ধার ও পরিষ্কার অভিযান শুরু করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এ লক্ষ্যেই গতকাল সোবহানীঘাটে সবজি বাজারের পাশে গোয়ালিছড়া উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। অভিযানে ছড়া দখল করে রাখা সব অবৈধ স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ছড়ার উপর অনেকেই ঢালাই দিয়েছেন, সেসব ঢালাইও ভাঙা হচ্ছে।
অভিযানে মেয়র আরিফ ছাড়াও প্যানেল মেয়র তৌফিক বক্স লিপন, কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, এসএম শওকত আমিন তৌহিদসহ সিসিকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সাব-কমিটির সদস্য কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন বলেন, সরকার আমাদেরকে কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে নগরীর উন্নয়নের জন্য। আমরা পরিকল্পনা মোতাবেক উন্নয়নকাজ করছি। কিন্তু অতিবিৃষ্টি বা সামান্য বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় দেখা যায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর অন্যতম কারণ ছড়া, ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। যা বৃষ্টি হলে পানি অপসারণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এই প্রেক্ষিতে সিসিকের সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাব-কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আজাদুর রহমান আজাদ, আমরা আরো দুজন কাউন্সিলর কমিটিতে রয়েছি। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটা ছড়া পরিদর্শন করেছি, এগুলো দেখা যাচ্ছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। ছড়ার পাশে টং দোকান গড়ে তোলা হয়েছে, এগুলো ময়লা-আবর্জনা ছড়ায় ফেলা হচ্ছে, ফলে ছড়ায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। লিপন আরও বলেন, যতোক্ষণ না নগরীর ১১টি ছড়া পরিপূর্ণভাবে উদ্ধার হচ্ছে, তকোক্ষণ কঠোরভাবে কার্যক্রম চলবে। পরিপূর্ণভাবে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারলে জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, নগরবাসীকে অনুরোধ করবো, যততত্র যাতে ময়লা-আবর্জনা তারা না ফেলেন। সিসিকের নির্ধারিত গাড়ি রয়েছে, ভ্যানগাড়ি রয়েছে, শ্রমিক রয়েছে, তাদের মাধ্যমে আপনারা বর্জ্যগুলো দিয়ে দিলে সিসিক সেগুলো নির্ধারিত স্থানে নিয়ে ফেলবে।
সাব-কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, বৃষ্টি এলেই দেখা যায় আমাদের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে। সেই পানি যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা কিন্তু আমরা নিজেরাই করেছি। আমরা যদি ছড়া উদ্ধার করতে পারি, ছড়া পরিষ্কার রাখতে পারি, আমরা ধারণা করছি সামনের বর্ষা মৌসুমে আমাদের জলাবদ্ধতার সমস্যা কমে আসবে, বাসাবাড়িতে আর হয়তো পানি ঢুকবে না। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছড়ার আশপাশে যেসব ব্যবসায়ী ভাইয়েরা আছেন, তাদেরকে সচেতন হতে হবে। ছড়ার মধ্যে পলিথিন আর পলিথিন, কেউ না কেউ এসব ফেলেছেন এবং তারা ব্যবসায়ী। জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়তে প্রত্যেক নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে, ভূমিকা রাখতে হবে। আজাদ জানান, গোয়ালিছড়ার উপরে এক থেকে দেড় হাজার ফুট জায়গায় ঢালাই করা হয়েছে। ফলে ঢালাইয়ের নিচে ছড়ায় কী রকম প্রতিবন্ধকতা আছে, তা দেখা যাচ্ছে না। এসব ঢালাই ভাঙার কাজও গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে।
অভিযান বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সামনে বর্ষা আসছে। আমরা জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী চাই। তিনি বলেন, সোবহানীঘাটে গোয়ালিছড়ার মেইন এক্সিট পয়েন্ট, যেটা সুরমা নদীতে গিয়ে পড়েছে। ছড়া থেকে সুরমা নদীতে গিয়ে যেখানে পানি পড়বে, সে জায়গা শুকনো। কিন্তু এর পেছনে ছড়ায় ৯ ফিট পানি রয়েছে! আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি, সবজি বাজার, অবৈধ দোকানপাটের ময়লা-আবর্জনা ফেলে ছড়াকে পুরোপুরি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ছড়ার দুটো এক্সিট পয়েন্ট আছে পানি যাওয়ার, এর মধ্যে একটা সম্পূর্ণ বন্ধ, আরেকটা আংশিক বন্ধ। কাজেই বর্ষা আসার আগে আমরা এগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে চাই। এজন্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। মেয়র জানান, সোবহানীঘাটের সবজি বাজার থেকে ময়লা-আবর্জনা ছড়ায় ফেলায় হয়। এই সবজি বাজার দক্ষিণ সুরমায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সবজি বাজার এখানে থাকা কোনোভাবেই উচিত নয়। দক্ষিণ সুরমায় ট্রাক টার্মিনালের আশপাশে এই বাজার করা গেলে পণ্য নিয়ে ট্রাক আসা সহজ হবে, ট্রাক টার্মিনালে রাখা যাবে। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো, তারাও যাতে এখান থেকে নিজেরা সরার চিন্তা করেন। আরিফ বলেন, হুট করেই তো সরানো সম্ভব নয়, তবে আমরা চেষ্টা করছি, তারাও চেষ্টা করছে। যতো দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা সরানো যায়, ততোই ভালো।