জগন্নাথপুরে প্রচন্ড শীতে জবুথবু জনজীবন

6

মো. শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে প্রচন্ড শীতের প্রভাবে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত থেকে বাঁচতে মানুষ গরম কাপড় কিনতে ফুটপাতের দোকানে লাইন দিয়েছেন।
এতোদিন জগন্নাথপুরে শীতের তেমন প্রভাব পড়েনি। রীতিমতো স্বাভাবিক ভাবে চলছিল জনজীবন। এর মধ্যে ২৬ ডিসেম্বর সোমবার ভোরে জগন্নাথপুরে বৃষ্টিপাত হয়। এ বৃষ্টিতে জমিতে রোপনকৃত বোরো ধান, শাক-সবজি, গাছপালার উপকার হয়েছে বলে কৃষক-জনতা জানান। তবে বৃষ্টির পর থেকে প্রায় সূর্য্যরে দেখা মেলেনি। মাঝে-মধ্যে দূর আকাশে সূর্য্যমিামা উঁকি দিলেও ছিলনা কোন প্রভাব। পুরোদিন ছিল রীতিমতো মেঘাচ্ছন্ন। বিকেলের পর থেকে হিম শীতল হয়ে যায় বাতাস। শীতল বাতাসে বাড়তে থাকে শীতের মাত্রা। এক পর্যায়ে অসহনীয় হয়ে যায়। প্রচন্ড শীতে হাট-বাজারে আসা মানুষজন রীতিমতো জবুথবু হয়ে পড়েন। চারদিকে শুরু হয় গরম কাপড় সংগ্রহের তোড়জোড়। সন্ধ্যার পর থেকে জগন্নাথপুর সদর সহ অন্যান্য হাট-বাজারে বেড়ে যায় ক্রেতাদের ভীড়। ধনাঢ্য পরিবারের মানুষ নামীদামী শপিংমল ও বিপনি বিতানে জ্যাকেট, সুয়েটার, কার্টিগান সহ গরম কাপড় কিনতে দেখা যায়। তবে ফুটপাতের কাপড়ের দোকানে মানুষের লাইন দেখা যায়। এখানে কমদামে শীত নিবারণের আশায় গরম কাপড় কিনতে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছেন। এতে গরম কাপড় বিক্রির ধুম পড়েছে বাজারে।
এ সময় বাজারে আসা কৃষক জহির মিয়া জানান, প্রতিদিন ভোরে যেতে হয় বোরো জমিতে কাজ করতে। তখন শীতের মাত্রা থাকে খুব বেশি। তাই কমদামে বড় জ্যাকেট কিনতে এসেছি। মৎস্যজীবি নিপেন দাস জানান, প্রতিদিন সকালে পানিতে নেমে জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা সংগ্রহ করি। এ প্রচন্ড শীত থেকে বাঁচতে গরম কাপড় কিনতে ও বাড়ির খরচ করতে বাজারে আসা। দিনমজুর আবদুল খালিক ও শ্রমিক রফিক মিয়া বলেন, আমরা গরীব মানুষ দিন আনি দিন খাই। কাজে গেলে ৪ থেকে ৫শ টাকা পাই। তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। এখন যে শীত পরছে, একটা জ্যাকেট না হলে কাজে যেতে পারব না। তাই ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে গরম কাপড় কিনতে দোকানির সঙ্গে দামদর করছি। মধ্যবিত্ত পরিবারের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমাদের চেয়ে দিনমজুর মানুষ অনেক ভালো। তারা কাজ পায়, কমবেশি রোজগার হয়। আমরা না পারি কাজ করতে, না পারি রোজগার করতে। প্রবাসী স্বজনেরা আছে, কাজ করলে তাদের মান যাবে। এমতাবস্থায় খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছি। এর মাঝে জেঁকে বসেছে শীত। অন্য বছরের পুরনো শীতের কাপড়গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন কাপড় কিনতে বাজারে এসেছি। প্রথমে গিয়েছিলাম নামীদামী দোকানে। সেখানে কাপড়ের দাম শুনে ফিরে এসেছি। আবার খালি হাতে বাড়ি ফেরা যাচ্ছেন না। শীত থেকে বাঁচতে পরিবারের প্রায় সবার জন্য গরম কাপড় কিনতে হবে। তাই দিনের বেশির ভাগ সময় চা-পান খেয়ে অন্য গল্প করে কাটিয়েছি। সন্ধ্যার পর রীতিমতো লোকচক্ষুর আড়ালে কমদামে কাপড় কিনতে ফুটপাতের দোকানে এসেছি। এখানে এসে বাজেটের ভেতরে কাপড় কিনতে পেরে অনেক খুশি হয়েছি। এ সময় আলাপের ফাঁকে এক পথচারী ভদ্রলোক অযাচিতভাবে কথায় শরিক হয়ে বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুরে যারা ধনী, তারা বেশি ধনী। যারা গরীব, তারা একেবারেই গরীব। তবে এই গরীব সেই গরীব নয়। যারা অসহায় মানুষ তারা তুলনামূলক ভালো আছেন। তাদেরকে অনেক ধনী মানুষ সহায়তা করে। তবে বেশি বেকায়কায় আছেন নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। হায়রে-মধ্যবিত্ত তারা না পারে কাউকে কিছু কইতে, আবার না পারে সইতে। যে কারণে লুকিয়ে রাতে কমদামের মাল খুজে বাজারে।