ইতিহাস রচনা করলো মরক্কো

11

স্পোর্টস ডেস্ক :
কাতার বিশ্বকাপ যেন শুরু থেকেই বিস্ময় নিয়ে হাজির হয়েছে এবার। সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার ২-০ গোলে হার দিয়ে সেই বিস্ময়ের শুরু। এরপর জাপানের কাছে জার্মানির হার, মরক্কোর কাছে ক্রোয়েশিয়ার আটকে যাওয়া, উরুগুয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার পয়েন্ট কেড়ে নেয়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইংল্যান্ডের জিততে না পারা, মরক্কোর কাছে বেলজিয়ামের হেরে যাওয়া, তিউনিসিয়ার কাছে ফ্রান্স, ক্যামেরুনের কাছে ব্রাজিলের হেরে যাওয়া, জাপানের কাছে স্পেনের হেরে যাওয়া, কোস্টারিকাকে হারিয়েও দ্বিতীয় রাউন্ডে জার্মানির যেতে না পারা, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে পর্তুগালের হারের কারণে উরুগুয়ের বিদায়- কত অঘটনই না ঘটেছে প্রথম রাউন্ডে!
কিন্তু বিস্ময় পরের রাউন্ডগুলোর জন্যও জমা রেখেছিলো কাতার বিশ্বকাপ। দ্বিতীয় রাউন্ডে সেই বিস্ময় দেখিয়েছে মরক্কো। স্পেনের মত দলকে টাইব্রেকারে বিদায় করে দিয়ে। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিদায় এবং পর্তুগালকে হারিয়ে মরক্কোর সেমিফাইনালে চলে যাওয়া- আর কত বিস্ময় দেখাবে এই বিশ্বকাপ! এই মরক্কো যদি ফ্রান্স কিংবা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালেও পৌঁছে যায়, তাহলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না এখনও আর।
এর আগে ক্যামেরুন, সেনেগাল, ঘানার মত দেশগুলো কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিলো (নাইজেরিয়া অনেক হাইফ তুলে বিশ্বকাপে আসে। তবে তাদের দৌড় ছিল সর্বোচ্চ দ্বিতীয় রাউন্ড); কিন্তু আফ্রিকান দেশগুলোর বিশ্বকাপ দৌড় শেষ আটেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। এবারই প্রথম কোনো আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল তথা সেরা চারে পৌঁছে গেছে মরক্কো। শুধু আফ্রিকান দেশই নয়, প্রথম কোনো মুসলিম দেশ হিসেবেও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছালো মরক্কো।
পর্তুগালের মত ইউরোপিয়ান শক্তিশালী দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে সেমিতে নাম লিখে নিয়েছে আফ্রিকান দেশটি। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে এসে পর্তুগালের জালে বলটি জড়ান ইউসেফ এল-নেসেরি। সাইডবেঞ্চে বসে বসে দলকে গোল হজম করতে দেখেন রোনালদো।
‘এফ’ গ্রুপে ছিল মরক্কো। এই গ্রুপে বাকি তিন প্রতিপক্ষ ছিলো ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম এবং কানাডা। প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে গোলশূন্য ড্র করে চমকে দিয়েছিলো মরক্কো। অনেকেই তাকে অঘটন বলেছিলো। কিন্তু পরের ম্যাচে যখন বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিলো মরক্কানরা, তখন সবাই নড়েচড়ে বসে। বলতে শুরু করে, এই মরক্কো তো অনেক দূর যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
শেষ ম্যাচে অবধারিতভাবেই কানাডাকে হারিয়েছে ২-১ গোলে। কানাডার বিপক্ষে আত্মঘাতি থেকে একটি বল নিজেদের জালে জড়ায়। এছাড়া পেনাল্টি, টাইব্রেকার আর যেভাবেই হোক- মরক্কোর জালে কেউ বল প্রবেশ করাতে পারেনি।
দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনের মুখোমুখি। সবাই বলেছিলো মরক্কোর দৌড় শেষ। কিন্তু ১২০ মিনিট স্পেনকে ঠেকিয়ে রেখেছিলো। এরপর টাইব্রেকার। সেখানে স্পেনের তিনটি শটই ঠেকিয়ে দিয়েছেন মরক্কো গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। আজ কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে গোলই করতে দিলো না।
যে পর্তুগাল দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের জালে ৬বার বল জড়িয়েছিলো, তারা কি না কোনোভাবেই মরক্কোর জাল খুঁজে পেলো না। বারবার ইয়াসিন বোনোর কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়াতে হয়েছে পর্তুগাল এবং রোনালাদোকে। শেষ মুহূর্তে রোনালদোর দুর্দান্ত একটি শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন বোনো। যার কারণে, বিদায় নিতে হলো পর্তুগালকে। সেমিতে পৌঁছে যায় মরক্কো।
এখন দেখার বিষয়, বিস্ময় কী সেমিফাইনালেও উপহার দিতে পারে কিনা মরক্কো। ফাইনালে পৌঁছে তারা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে কি না।