নাশকতা রুখতে ব্যবস্থা নিন

11

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা কিছুটা দুর্বল হলেও তারা একেবারে হারিয়ে যায়নি। ভেতরে ভেতরে তারা সাংগঠনিক তৎপরতা ও নাশকতার ছক আঁটছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব জানিয়েছে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আবার হামলার সুযোগ খুঁজছে জঙ্গিরা। সম্প্রতি গ্রেফতার পাঁচ জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে তারা।
অবশ্য র‌্যাব মনে করছে, জঙ্গিদের এখন বড় ধরনের হামলা চালানোর কোনো সক্ষমতা নেই বলে কিছু একটা করে নিজেদের তৎপরতা জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। র‌্যাব মনে করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভেঙে যাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে টার্গেট করছে তারা।
দেশে জঙ্গিবাদের চর্চা দৃশ্যমান হয় দুই দশক আগে আত্মঘাতী বোমা হামলার মধ্য দিয়ে। শুরুর দিকে পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে এবং আরো কিছু জায়গায় বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এরপর বাংলা ভাইয়ের উত্থান ঘটে। জঙ্গিরা সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটায় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। ২০১৩ সালে একটু ভিন্নভাবে। ব্যক্তিবিশেষকে টার্গেট করে চাপাতি হামলা চালাতে শুরু করে তারা। কোথাও কোথাও আত্মঘাতী বোমা হামলার কৌশলও প্রয়োগ করা হয়। এ পর্বের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটানো হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে। ওই হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হন। একই বছর ৭ জুলাই ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত শুরুর প্রাক্কালে জঙ্গিরা কর্তব্যরত পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ চালায়। তাতে পুলিশসহ চারজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা কিছুটা দুর্বল হলেও তারা একেবারে হারিয়ে যায়নি। ভেতরে ভেতরে তারা সাংগঠনিক তৎপরতা ও নাশকতার ছক আঁটছে। তারই প্রমাণ গত ২০ নভেম্বর ঢাকা সিএমএম আদালত এলাকায় পুলিশ হেফাজত থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা।
ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে আটক করা সম্ভব না হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে র‌্যাব বলেছে, জঙ্গিদের অর্থের জোগানদাতা দেশ ও দেশের বাইরের অনেক কুশীলব। এর মধ্যে অনেক ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতাও রয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সাংবাদিকদের বলেছেন, জামায়াত-শিবিরও হামলা-নাশকতার পরিকল্পনা করছে।
জঙ্গিবাদ এবং তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িকতাবাদী রাজনীতি। সেখান থেকেই মূলত জঙ্গিদের উৎপত্তি। এই অপশক্তিটি আগের মতোই রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিজরতের নামে ঘরছাড়া হয়েছে অনেক তরুণ। গত মাসের শুরুর দিকে  প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে ভারী অস্ত্র কিনতে টাকা দিচ্ছে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন। জঙ্গি হামলার ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার অনেক জঙ্গি বিচারের মুখোমুখি হলেও তাদের গডফাদাররা এখনো বিচারের বাইরে।
জঙ্গিরা একেবারে হারিয়ে যায়নি। ভেতরে ভেতরে তারা সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে। নাশকতার ছক আঁটছে। কাজেই যেকোনো ধরনের নাশকতা রুখতে এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।