ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে আলোচনায় সিলেটের ৪ নেতা

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বহু আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দেশের প্রাচীনতম ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন এলে বরাবরই আলোচনার শীর্ষে থাকে আঞ্চলিক হিসাব-নিকাশ। ব্যতিক্রম ঘটছে না এবারের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনেও। কারা আসছেন নেতৃত্বে? কোন এলাকা পাচ্ছে প্রাধান্য? সংকটকালীন সময়ে কার কী অবদান? কার পারিবারিক ঐতিহ্য কী? এসব নানা আলোচনায় সরগরম এখন ছাত্রলীগের রাজনীতি।
কাল ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের এই জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২৭ নভেম্বর, রবিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি এই তথ্য জানিয়েছেন।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতার ফরম জমা দিয়েছেন ২৫৪ জন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৯৬ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৫৮ জন জমা দিয়েছেন। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার শামস-ই-নোমান।
পদপ্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহ এবং জমা দেয়া শুরু হয়েছিল গত ৩০ নভেম্বর, যা শেষ হয় ৩ ডিসেম্বর। ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম সুমন, নির্বাচন কমিশনার আশরাফুল ইসলাম টিটন ও শামস-ই-নোমান এই নির্দেশ দিয়েছিলেন ২৯ নভেম্বর।
এর আগে আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী ছাত্রলীগের এই জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে ৮ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং ৯ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ২১ নভেম্বর, সোমবার বেলা ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ।
মূলত, ৪ নভেম্বর (শুক্রবার) ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। পরে ১৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার তা ৩ তারিখের পরিবর্তে ৮ ডিসেম্বর করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান যাওয়ার কথা ছিল। যার কারণে সম্মেলন পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নেয়া হয়। কিন্তু ওই সফর বাতিল হওয়ায় সম্মেলনের তারিখ ৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে।
এদিকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যেন ঘুম নেই পদপ্রত্যাশীদের। সম্মেলনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, পদপ্রত্যাশী ও কর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস, আকাঙ্ক্ষা ততই বেড়ে চলেছে। সংগঠনের শীর্ষপদ পেতে পদপ্রত্যাশীরাও শেষ মুহূর্তের দৌঁড়ঝাপ অব্যাহত রেখেছেন। সবাই যার যার অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ হাইকমাণ্ডের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। তারা সংগঠনের জন্য নিজেদের ত্যাগ ও ইতিবাচক দিকগুলো বিভিন্নভাবে প্রচার করছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের এবার নেতৃত্ব নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি নেতা বাছাইয়ে নেতৃত্ব দিবেন।
এদিকে ছাত্রলীগের বিগত সম্মেলনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনে কয়েকটি বিষয় দেখা হয়। তার মধ্যে- পারিবারিক পরিচিতি, নিয়মিত ছাত্রত্ব, সংগঠনের জন্য ত্যাগ ও এলাকা। নেতৃত্ব নির্বাচনে অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি এলাকার বিষয়টি বিশেষ প্রাধান্য পেয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন বিভাগের পদপ্রত্যাশীরা আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। সম্মেলনে নেতৃত্বের দৌঁড়ে সিলেট অঞ্চল থেকে আলোচিত যারা রয়েছেন,
মাহবুব খান (কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), আল আমিন রহমান (কেন্দ্রীয় কমিটির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ, ঢাবি), মিহির রঞ্জন দাস (আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি), কাজল দাস (সভাপতি, জগন্নাথ হল ছাত্রলীগ, ঢাবি ও সাবেক জিএস জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদ)।
কেমন নেতৃত্ব চান আলোচিত পদপ্রত্যাশীরা?
ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে ভাবনা জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বিবার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব মেধাবী, সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমী হতে হবে এবং পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এবং বিএনপি জামায়াতের সাথে যাতে কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা না থাকে, সেই বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখতে হবে। বিশেষ করে যে নেতৃত্বে আসবে তার ব্যাকগ্রাউন্ড যাতে হাইস্কুল থেকে দেখা হয়। কারণ হাইস্কুল থেকে অনেকে শিবিরের রাজনীতিতে প্রবেশ করে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অনার্স, মাস্টার্সে পড়াকালীন দাবা সাজিয়ে ছাত্রলীগ হয়ে যায়। এ বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। সর্বোপরি, যারা রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা নেতৃত্বে আসলে সংগঠন শক্তিশালী হবে।
ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন রহমান বিবার্তাকে বলেন, সাহসী এবং তেজদীপ্ত নেতৃত্ব, যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে এমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করি। সর্বোপরি, যারা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপসহীন থাকবে, একই সাথে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপির যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে রাজপথে সাহসী ভূমিকা পালন করার যোগ্যতা রাখে এমন নেতৃত্ব ছাত্রসমাজ প্রত্যাশা করে৷