চাই বিনিয়োগের পরিবেশ

4

কভিড-১৯ মহামারিসহ নানা কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতির যে টালমাটাল অবস্থা চলছে, তার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে এবং এগিয়ে চলার গতি ধরে রাখতে পেরেছে। শুধু অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য নয়, বিশ্ববাণিজ্যেও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বহুজাতিক কম্পানিগুলোর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলছে। বিগত অর্থবছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে এবং উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে রপ্তানির পরিমাণ।
আশপাশের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক ভালো। বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমে ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের মাইলফলক অর্জনের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এমন অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) এক গবেষণা প্রতিবেদনেও তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় অগ্রগতির নানা দিক। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের এমন অগ্রগতির মূলে রয়েছে দেশের প্রতিশ্রুতিশীল ও সম্ভাবনাময় বেসরকারি খাত।
বাংলাদেশে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে এখনো বহু ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শিল্পায়নের অপরিহার্য শর্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন এখনো অনেক পিছিয়ে। জমি প্রাপ্তি, নিবন্ধন, বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া, ব্যাংকঋণ, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে নানা ধরনের ভোগান্তি। উন্নত দেশের তুলনায় তো বটেই, প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায়ও পিছিয়ে আছে আমাদের ব্যাংকিং খাত, যা বেসরকারি খাতের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে। তা সত্ত্বেও আমাদের বেসরকারি খাতের এমন অগ্রগতি উন্নত বিশ্বের অর্থনীতি বাংলাদেশ ২০৪০ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। বিসিজির প্রতিবেদনেও সেই সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের উদীয়মান কম্পানিগুলো উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারেও নিজেদের অবস্থান ক্রমেই সুসংহত করছে বাংলাদেশের কম্পানিগুলো। বাংলাদেশের উদীয়মান শ্রমশক্তি ক্রমেই সমৃদ্ধ হচ্ছে।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ উপযোগী অর্থের অভাব নেই। কিন্তু ঘাটে ঘাটে নাকানি-চুবানির ভয়ে অনেকেই সেই পথে পা বাড়ান না। তাই অনেকে জমানো অর্থ নানা উপায়ে বিদেশে পাচার করেন। এই নেতিবাচকতা কাটিয়ে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বেসরকারি খাতকে আরো এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান ও সহযোগিতা করতে হবে।