সিলেট আলিয়া মাদ্রাসার গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ॥ দেশের মানুষ এখন শান্তিতে নেই, প্রতিদিনই নিত্যেপণ্যের দাম বাড়ছে

18
সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি- মামুন হোসেন

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের মানুষ এখন শান্তিতে নেই। প্রতিদিনই নিত্যেপণ্যের দাম বাড়ছে। চালের দাম বৃদ্ধি হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ বলেছিলো ১০ টাকা কেজি ধরে চাল খাওয়াবে। কিন্তু এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকার কম চাল মিলছে না। দেশের ৩ কোটি মানুষ বেকার। এ সরকার গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৪ সালের নির্বাচন কি সুষ্ঠু হয়েছে? হয়নি। তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। এ সরকার মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। তাদের বিচার এ দেশের জনগণ করবে। জনগণের আদালতে তাদের বিচার হবে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে তাদের চিহ্নিত করা হবে। তারা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর চৌহাট্টায় ঐতিহাসিক সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সিলেটে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ.জে.ড. এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ফজলুর রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদী লুনা, উপদেষ্টা ডা. এনামুল হক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মুয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সহ কৃষি ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকী ও ছাত্রদলের সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ। শনিবার সকাল ১১ টায় শুরু হওয়া গণসমাবেশ চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ভোলায় আব্দুর রহিম, নূরে আলম নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধান এবং মুন্সীগঞ্জে শাওনকে এই সরকারের পুলিশ এবং গুন্ডাবাহিনী হত্যা করেছে। তারা মনে করছে আগের মতো হত্যা করলে সবকিছু থেমে থাকবে, কিন্তু থেমে থাকেনি উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং একটার পর একটা বিভাগীয় সমাবেশ বেশি জনসমাগমের মাধ্যমে সফল হচ্ছে। এর আগে গতকাল খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে গণসমাবেশে আসেন নেতাকর্মীরা। এদিকে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমাবেশের আশপাশ ও পুরো সিলেট জুড়ে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সিলেটের কোন স্থানে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ মামলা মামলা খেলায় লিপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছে। এখনও দিচ্ছে। গায়েবি মামলায় আমাদের অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। এভাবে গত ১৪ বছর ধরে তারা এই দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। আর যদি কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় বা মিথ্যা মামলা দেয়া হয় এদেশের মানুষ প্রতিহত করবে।
সংবিধান নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের দোহাই দিয়ে যাচ্ছেন। এ সংবিধান তো তিনি তৈরি করেছেন। কিন্তু যে সংবিধান কাটাচেড়া করে তিনি নতুন করে নিজের মতো সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছেন। তা তো হতে পারে না। নির্বাচন হতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। কোনো সরকারের অধীনে নয়। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবো। তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ফ্যাসিস্ট-দানবীয় সরকারকে পরাজিত করতে হবে। যারা আমাদের সমস্ত স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে, অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তাদের পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ঝাড়ি-ঝুড়ি খাটবে না। পুলিশ দিয়ে, আমলা দিয়ে রাতের অন্ধকারে সবকিছু পাল্টিয়ে দেবা, ইভিএম করবা- ওটা হবে না। জনগণ তার ভোট এবার দেখে নেবে। কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেবে। সেই ভোট হতে হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। সকল রাজনৈতিক দল ও মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- আসুন এখন আর বসে থাকার সময় নেই। সমস্ত রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান আমরা সকলে এক হয়ে যেভাবে ৭১ সালে লড়াই করেছিলাম, সংগ্রাম করেছিলাম সেইভাবে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করি। জনগণের রাষ্ট্র নির্মাণ করি।
তিনি সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, সিলেটের ইতিহাস যুদ্ধের ইতিহাস। এ সিলেটের মাটি পবিত্র। যেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এই সিলেটের কর্নেল এমএজি আতাউল গণী ওসমানী মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৭১-এর ডিসেম্বরে এ সিলেটকে মুক্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা অনেক সৌভাগ্যবান যে আমরা যার নেতৃত্বে কাজ করছি, সে আপনাদের জামাতা। এটা আমাদের গর্ব। তিনি সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা একটি নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন। আজ এ যুদ্ধ আপনাদের নতুন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আপনাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আপনাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার। এই যুদ্ধ আপনাদের ভাতের অধিকার ফিরে পাওয়ার। সিলেটের ইতিহাস হচ্ছে যুদ্ধের ইতিহাস। আপনাদের ইতিহাস যুদ্ধে জয়ের ইতিহাস। আজকে সিলেটের পুণ্যভূমি থেকে যুদ্ধ শুরু হলো, এই যুদ্ধে আমরা অবশ্যই জয়ী হব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্যের শেষের দিকে জনতার উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আমরা দেশে শান্তি চাই। অশান্তি চাই না। আমাদের দাবি এক সরকারের পতন চাই। রাজপথেই এর ফয়সালা হবে। এই দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই অভিলম্বে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। মধ্যবর্তী সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সকল দলকে আমরা আহ্বান জানাই, আসুন আমরা একাত্তরের মতো এক হই। এই দানবীয় সরকারকে সবাই মিলে পরাজিত করি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকী বলেন, আপনারা কড়া কর্মসূচি দেন, আমাদের রক্ত-প্রাণ দিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে ছাড়ব।
সিলেটে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল। গতকাল সিলেটে অনুষ্ঠিত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে তাকে স্মরণ করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের দলের নেতা কামালকে খুন করা হয়েছে। আসামীরা এখনো অধরা। আমি তাকে স্মরণ করছি। আমরা তার হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসবো।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ বলেছেন, শেখ হাসিনার পতন ছাড়া আমরা কেউ ঘরে ফিরে যাব না। আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য একটাই শেখ হাসিনার কবল থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। তাকে মুক্ত করার কোনো বিকল্প নাই। জি কে গউছ আরও বলেন, ১৯৭১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করে আমাদের পতাকা দিয়ে গেছেন। আজকে ২০২২ সালে এসে সেই পতাকা লাঠির মাথায় বেঁধেছে। শেখ হাসিনার পতন ছাড়া এই লাঠি হাত ছাড়া করা যাবে না। এই লাঠি শেষ পর্যন্ত আমাদের হাতে রাখতে হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, আজকের গণসাবেশ সিলেটের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এক সমাবেশ। গণসমাবেশ একদিনের থাকলেও ৩ দিন ধরেই সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ এ মাঠের দখল নিয়ে আছেন। সিলেটের এ গণসমাবেশ প্রমাণ করে সরকারের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। মেয়র আরিফ আরও বলেন, সিলেটের জনগণ সরকারকে দেখিয়ে দিয়েছে, সিলেটে মাটি বিএনপির ঘাঁটি। সিলেটবাসী বিএনপি, বিএনপির চলমান আন্দোলনের সবগুলো দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। সিলেটবাসীসহ দেশের সব মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্তি করবো। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওবায়দুল কাদেরকে আপনার কাউয়া বলবেন না, তিনি কাউয়া নন তিনি করোনা বিশেষজ্ঞ। ওবায়দুল কাদের বলেন তারা দেশে করোনা জয় করেছেন। আবার কয়েকদিন পরে বলেন দেশে করোনা যাচ্ছে না কোন দিক থেকে যে আবার আসে তাই সবাই মাক্স পরার কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ১ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ১ হাজার নেতাকর্মীকে গুম করেছে। অজস্র নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড করে এ সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। তাদের বিচার এ দেশের মানুষ করবে। ইলিয়াস পত্নী আরও বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের সমাবেশ দেখে ভয় পাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এ সমাবেশকে সফল করতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। আমি তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। এদেশের জনগণকে নিয়ে তত্ববদায়ক সরকার গঠন করবো।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের মানুষের প্রতি মর্যাদা বোধ নেই, মমতা বোধ নেই। আজ রবিবার ২০ নভেম্বর তারেক রহমানের জন্ম দিন। আমরা তার জন্মদিনে আশাকরি বাংলাদেশের এ দুর্যোগময় সময়ে তারেক রহমানকে যেন আল্লাহ তওফিক দেন তিনি তার পিতার ব্যান্ডের রাজনীতি করেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমার ছিলেন সততার রাজনীতি। তিনি স্বজনপ্রীতির রাজনীতি করেননি। তিনি উন্নয়ন উৎপাদনের রাজনীতি করেন। তিনি বলেন, মানুষের বয়স বাড়েলে মিথ্যা কথা কম বলে, গোনা কম করে, কিন্তু আমাদের দেশের সরকার মিথ্যা কথা বলতে চোখ কাপে না। এরা দাবি করে ২০১৮ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে। এরা নিজেদের ছাড়া অন্য কারো প্রতি তাদের কোনো মূল্যবোধ নাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ শুধু খেলার ডাক দেয়। তবে তারা তো দরজা বন্ধ করে খেলায় পারদর্শী। যে কারণে পাপিয়ারা ধরা পড়লে ওবায়দুল কাদের আর তার দলের নেতাদের বুক ধড়ফড় করে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, দেশব্যাপী বিএনপি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকার ধর্মঘট ডেকে গণপবিরহন চলাচল বন্ধ করে এসব সমাবেশ ঠেকাতে চায়। তবু সমাবেশ হচ্ছে। প্রতিটি গণসাবেশে জস্্েরাত নামে। সরকারকে একদিন জবাব দিতে হবে- এসব ধর্মঘট ডেকে প্রতিদিন দেশের কত কোটি টাকার ক্ষতি করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এ কারণে যে, আজকের গণসমাবেশে সিলেটের আলিয়া মাদরাসার মাঠ কানায় ভর্তি।
এর আগে শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে এতটি ফ্লাইটে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে তিনি দলীয় নেত্রীবৃন্দকে নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন।
এদিকে, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুরো সিলেট নগরী কঠোর নজরদারিতে রেখে ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মাঠে মোতায়েন করা ছিলো বিপুল সংখ্যক পুলিশ। এছাড়া নগরীর মোড়ে মোড়ে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি করা হয় পথচারী ও যানবাহনে চলাচল করা যাত্রীদের। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মাঠে মোতায়েন ছিলো ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নিয়োছিত ছিলো।
আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে সরেজমিনে বিএনপির সমাবেশস্থলে দেখা যায়, শতাধিক মাইক ও সিসি ক্যামেরা বসানো ছিলো। নেতাকর্মীদের সমাবেশ স্পষ্টভাবে দেখানোর জন্য দুটি ‘বড় পর্দা’ স্থাপন করা ছিলো।
এসএমপি সূত্র জানায়, শুক্রবার ১৮ নভেম্বর দিন থেকে মহানগর এলাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে ১৯টি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হয়। সমাবেশস্থলসহ মহানগরীতে কয়েক শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দে জানান, বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে নগরীজুড়ে নজরদারি বাড়ানো ছিলো। সেই সঙ্গে পোষাকে-সাদা পোষাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। তার মধ্যে ১৬টি পকেট টিম, ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করে। এছাড়া কুইক রেসপন্স টিম-সিআরটি, বোম্ব ডিসপোজাল টিম ও দুইটি এপিসি কার রাখা হয়। কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা হলে তা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য। তবে কোন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।