সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ সাবেক অতিরিক্ত সচিবের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের নামে রেকর্ডের অভিযোগ

6

স্টাফ রিপোর্টার :
গোলাপগঞ্জের কৃতী সন্তান, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব, ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ও প্রখ্যাত রম্য লেখক আতাউর রহমানের জমি অন্যের নামে লিখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিলেটের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে আরেকজনকে এ জমি লিখে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার ভায়রা গোলাপগঞ্জ উপজেলার রফিপুর গ্রামের মালিক জোনেদ আহমদ।
গতকাল সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের মৃত আবুল খায়রাতের পুত্র আতাউর রহমানকে ১৯৯৪ সালের ২১ মার্চ শাহজালাল উপশহরের জে ব্লকের ৪ নম্বর রোডের (৫ কাটা বা সাড়ে ৮ শতক) ২৯ নম্বর প্লটটি ৯৯ বছরের জন্যে ইজারা দেওয়া হয়। ২০০৭ সালের ১৩ মে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সিলেট উপবিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী-১ মো. মুনছুর আলী প্লটটির দখলপত্র আতাউর রহমানকে সমঝিয়ে দেন।’
জোনেদ আহমদ জানান, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালের ২৮ জুন প্লটটি আতাউর রহমানের নামে ইজারা দলিল রেজিস্ট্রি করে দিতে সিলেটের সাব-রেজিস্টারকে চিঠি দেন। এর প্রেক্ষিতে দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। দলিল নম্বর- ৯১৩০/২০০৭। মাঠ পর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম চলাকালে প্লটটি নিজের নামে আতাউর রহমান রেকর্ড করাতে পারেননি। কারন, তিনি ওই সময়ে সরকারি চাকরির সুবাদে অন্যত্র কর্মরত ছিলেন।
তিনি আরও জানান, মাঠ জরিপে এসএ ১২৫ ও ১২৬ নম্বর দাগ থেকে সৃষ্ট আর.এস ৪১২২ নম্বর দাগে ৮ শতক ২৬ পয়েন্ট ভূমি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও জনৈক তারা মিয়া গংদের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি বাদী হয়ে ভূমি তার নামে রেকর্ড সংশোধনের জন্যে ১১ নম্বর আর.এস ডিপি খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৩৬০ নম্বর আপত্তি এবং ১৭৪৮ নম্বর আর.এস খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক তারা মিয়া গংদের বিরুদ্ধে ৩৫৯ নম্বর আপত্তি মামলা দায়ের করেন।’
তিনি জানান, ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে আপত্তি কর্মকর্তা মামলা দুটি খারিজ করে দেন। এরপর তিনি ৩১ বিধি অনুযায়ী খারিজ হওয়া দুটি মামলার বিরুদ্ধে আপীল করেন। আপীল মামলা নম্বর-১৩১৬৭/২০১৬। সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ও আপীল অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর এই আপীল মামলার শুনানি করেন। শুনানী শেষে ওই দিনই রায় ঘোষণা করে আতাউর রহমানের নামে ওই ভূমির রেকর্ড দিয়ে মহিতোষ চন্দ্র দাস নিজে স্বাক্ষর করে তাৎক্ষণিকভাবে রায় অনুযায়ী ৪১০৩ নম্বর খতিয়ানে আতাউর রহমানের নামে রেকর্ড করে দিয়ে পর্চাও দিয়ে দেন।
মালিক জোনেদ আহমদ বলেন, ‘আতাউর রহমানের মৃত্যুর আগে আমাকে আমমোক্তার নিযুক্ত করা হয়। মৃত্যুর পর আমি সিলেট সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস থেকে সাদিপুর দ্বিতীয়খণ্ড মৌজার আর.এস ৪১০৩ নম্বর খতিয়ানের একটি মুদ্রিত কপি সংগ্রহ করি। মুদ্রিত কপিতে দেখা যায়, আতাউর রহমানকে হাতে লিখে মহিতোষ চন্দ্র দাস যে খতিয়ান দিয়েছিলেন মুদ্রিত কপিতে এর অস্তিত্ব নেই। খতিয়ানে এই ভূমির মালিক হিসেবে জকিগঞ্জ উপজেলার ফুলতলা গ্রামের হাজী আব্দুল বারির পুত্র আব্দুস শহীদ চৌধুরীর নাম রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টির রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে একপর্যায়ে আতাউর রহমানের আপীল মামলার (১৩১৬৭/২০১৬) রায়ের কপিও সংগ্রহ করি। এই আপীল মামলার তিনিই একমাত্র বাদী। দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে ১ নম্বরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, ২ নম্বরে তারা মিয়া, ৩ নম্বরে জমিলা খাতুন ও ৪ নম্বরে রেবু মিয়াকে বিবাদী করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর আপীল শুনানি হয়। একমাত্র বাদী আপীল করার পরেও এতে বাদী হিসেবে আব্দুস শহীদ চৌধুরী নামের আরেকজনের নাম লেখা হয়। সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে মহিতোষ চন্দ্র দাস ২য় বাদীর নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। রায় পরিবর্তন করে তিনি সাবেক অতিরিক্ত সচিবের ভূমি আব্দুস শহীদ চৌধুরীর নামে রেকর্ড করে দেন।’
জালিয়াতির এ বিষয়ে আমি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অধিদপ্তরের নির্দেশে বিষয়টির তদন্ত করা হলে দীর্ঘ তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্ত শেষে গত ২১ সেপ্টেম্বর ৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে অতিরিক্ত সচিবের ভূমি কোনো আপত্তি বা মামলা ছাড়াই রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে দেওয়া হয় তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।’
জোনেদ আহমদ বলেণ, ‘কেবল আতাউর রহমানের জমিই নয়; দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মহিতোষ চন্দ্র দাস সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর হাতিমনগর উত্তর মৌজার সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ২৭ একর জমি ভুয়া কবুলিয়াতের মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করে দেন। এই জমি উদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরী সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন।’
‘কেবল মহিতোষ চন্দ্র দাসই নয়; তার পেশকার প্রসেস সার্ভার আব্দুল কাদিরও কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেৃন। নগরের আম্বরখানার ঘুর্নী এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ধ্রুব রঞ্জন দেব বিশ্বাস সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়ায় সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জমি ব্যক্তি মালিকানায় দিতে প্রতিবেদন দেন। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারি জমি ব্যক্তি মালিকানায় দিয়ে দিতে নিশ্চয়ই তিনি কোনো স্বার্থ ছাড়া প্রতিবেদন দেননি। এরকম আরও অনেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে যা সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।’-যোগ করেন তিনি।
সেটেলমেন্ট অফিসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, জালিয়াতি ও হয়রানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রী, ভূমি সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।