জগন্নাথপুরে স্বপ্নের রাণীগঞ্জ সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী, অনুষ্ঠানে ২০ হাজার মানুষের সমাগম

9
ভার্চুয়ালি রাণীগঞ্জ সেতু উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জগন্নাথপুরে রাণীগঞ্জ সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী সহ উপস্থিত জনতার একাংশ।

মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে একটি সেতুর অভাবে যুগযুগ ধরে মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসছিলেন। এ সময় দুর্ভোগের শিকার হওয়া মানুষের একটাই স্বপ্ন ও দাবি ছিল কুশিয়ারা নদীতে একটি সেতু হবে। সেতু হলে আর দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। একটি মাত্র সেতুর অভাবে অত্র অঞ্চলের মানুষ সিলেট হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতেন। এতে অতিরিক্ত সময়, অধিক দুরত্ব ও অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়েছে।
অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে কুশিয়ারা নদীর উপর রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকিতে মাত্র ৬ বছরের মাথায় ২০২২ সালের অক্টোবরে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
পরিশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও দিন ব্যাপী নানা উৎসব আয়োজনের মধ্য ৭ নভেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে দেশের ১০০টি সেতুর সাথে ভার্চুয়ালি রাণীগঞ্জ সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় ভাবে রাণীগঞ্জ বিদ্যালয় উচ্চ মাঠ থেকে ভার্চুয়ালিযুক্ত থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধামাইল গান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বাউল গান ও উপকারভোগী বক্তব্য রাখেন। এতে রাণীগঞ্জ মাঠের অনুষ্ঠান মঞ্চে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাবেক এমপি এডভোকেট শাহানা রব্বানী, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজুর রহমান, সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার এহসান শাহ, নির্বাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আবুল কাশেম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, প্রশাসনের সকল পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিঃ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাজেদুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম, সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) শুভাশীষ ধর, জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান, সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আবদুর রব সরকার, নব-নির্বাচিত জগন্নাথপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু, নব-নির্বাচিত সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য মাহতাবুল হাসান সমুজ, নব-নির্বাচিত জগন্নাথপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লালন, নব-নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া খানম সাথী, রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম, আশারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ূব খান, চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসান, রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সভাপতি হাজী সুন্দর আলী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি ছালেহ আহমদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল মুকিত সহ সকল শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ও সংগীত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান ও সেতু এলাকা মাতিয়ে তুলেন শিল্পীরা। এতে জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম হয়।
পরে রাণীগঞ্জ সেতুতে আনুষ্ঠানিক ভাবে গাড়ি চলাচল উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। রাণীগঞ্জ সেতুটি উদ্বোধনের মাধ্যমে অবহেলিত ভাটির জনপদের মানুষের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। যুগযুগ ধরে চলে আসা কষ্টের সমাপ্তি হয়েছে। এখন আর সিলেট হয়ে ঢাকা যেতে হবে না। জগন্নাথপুর থেকে সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করা যাবে। এতে দুরত্ব কমেছে ৫২ কিলোমিটার রাস্তা। সময় বাঁচলো কমপক্ষে ২ ঘন্টা। ভাড়া কমলো প্রায় ২০০ টাকা। দেশের সার্বিক উন্নয়নে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো পুরো সুনামগঞ্জবাসী। তাই রাণীগঞ্জ সেতুটি উপহার দেয়ায় আনন্দে আপ্লুত হয়ে সর্বস্তরের উপকারভোগী জনতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।