পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে

12

প্রায় প্রতিবছরই পাহাড়ধসে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। কখনো কখনো বড় ধরনের পাহাড়ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর সারা দেশে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনার পর পর দেশব্যাপী পাহাড় কাটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিবাদ হয়। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটাকে দায়ী করা হয়।
খবরে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা বড় একটি পাহাড় কাটছেন। এরই মধ্যে উচ্চতায় পাহাড়টির ৮-১০ ফুট কেটে ফেলা হয়েছে। পাকা সড়কের পাশের অংশটি কাটা বাকি; সেটি কাটা হবে সবার শেষে। প্রথম পর্যায়ে পাহাড়টির প্রায় ৮-১০ ফুট উচ্চতার সমান কেটে ফেলা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো কাটা অংশটি আরো তিন-চার ফুট আবারও কাটা হচ্ছে। সপ্তাহখানেক ধরে পাকা সড়কের পাশে পাহাড় কাটা হলেও দেখার কেউ নেই। ওই নেতা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, এটি তাঁর নিজস্ব পাহাড়। এখানে একটি খামারবাড়ি করার জন্য তিনি পাহাড়টি কাটছেন।
অথচ আইন অনুযায়ী ১৯৯৫ সাল থেকে দেশে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে স্পষ্ট বলা আছে, সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কোনোটাই কাটা যাবে না। শুধু পাহাড় কাটা নয়, দেদার পাহাড়ের গাছও কাটা হচ্ছে। বিশ্বের সর্বত্র যখন সবুজ প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি রক্ষার জন্য আন্দোলন চলছে, আমাদের দেশে তখন পাহাড় ও সবুজ প্রকৃতি ধ্বংস করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
২০০৮ সালের জুলাই মাসে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের জারি করা প্রজ্ঞাপনেও পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ থাকার কথা, সর্বোচ্চ শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দীঘিনালায় এর আগেও কয়েকবার পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটেছে। তখন আইনি প্রক্রিয়ায় পাহাড় কাটা বন্ধও করা হয়েছে। মামলাও করা হয়েছে।
পাহাড় কাটার ফলে শুধু দুর্ঘটনা ঘটে তা-ই নয়, দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর শুধু যে পাহাড় কাটা হচ্ছে তা-ই নয়, পাহাড়ের প্রকৃতিও বদলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পাহাড়ের বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কারণ প্রাণীদের পক্ষে সমতলে এসে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
প্রকৃতিবিনাশী কর্মকা- চলতে দেওয়া যায় না। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। আমরা আশা করব, দীঘিনালায় পাহাড় কাটার ঘটনায় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।