নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষিত

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নিরাপদ সড়কের দাবিতে মামলা গড়িয়েছে দেশের উচ্চ আদালত পর্যন্ত। সেসব মামলায় কার্যকরি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে বাস্তবায়নের অভাবে এখনও অবহেলিত আদালতের সেসব নির্দেশনা। ফলে উপেক্ষিত রয়ে গেছে আদালতের নির্দেশে সড়ককে নিরাপদ করার সম্ভাবনাটুকু।
২০১৮ সালের তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হাসানের দুর্ঘটনায় দুই বাস কর্তৃপক্ষের দায় নির্ধারণ ও দায়ীদের ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হিসেবে ছিলেন বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) প্রফেসর ও ডিরেক্টর ড. মো. মিজানুর রহমান। আর কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান এবং নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
অনুসন্ধান কমিটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ নেই বললেই চলে। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) বিভাগটি বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা, বিশ্লেষণ, অনুসন্ধান, কার্যকরী প্রশিক্ষণ ও এর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা সীমিত সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলছে। সরকারের এই বিভাগটির উন্নয়নে জোর দেওয়া উচিত।
এই মামলায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ১৮টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম ছিলো- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, পুলিশ, বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, নিরাপদ সড়ক চাই-সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি কারিগরি টিম গড়ে তোলা; তাদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ রাখা; বড় দুর্ঘটনাগুলো অনুসন্ধানে টিম অনুসারে কাজ করা; দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়কে সিসিটিভি বসানো; রাজধানীর বাসগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা সংক্রান্ত সেফটি ফিচারের (সাইড লাইট, হুইপার, হেড লাইট, টায়ার, প্রবেশের দরজা এবং জানালাগুলো) মনোন্নয়ন; চলন্ত অবস্থায় গাড়ির দরজাগুলো বন্ধ রাখা; দরজার কাছে কোনও যাত্রীকে দাঁড়িয়ে যেতে না দেওয়া; কোনও রকম দেরি না করে হাসপাতালগুলোকে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা ও ড্রাইভারদের বাস কোম্পানি মালিক কর্তৃক মাসিক বেতনভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া।
এদিকে হাইকোর্টের আরেকটি মামলায় ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও বিচারকদের ট্রাফিক জ্যামের ভোগান্তি দূর করতে জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে সে নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নিরাপদ সড়ক নিয়ে অনেকটাই উপেক্ষিত হয়ে আছে হাইকোর্টের আদেশ-নির্দেশ।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আদালত মানুষের জন্য সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। আদালতের রায় মেনে চলার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে কারণেই সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সবার মেনে চলতে হবে। নয়তো সেটি আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়বে। এটিকে কখনও রেওয়াজে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না।
নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি সড়কে দুর্ঘটনার বিষয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে বেশ কিছু মামলারও শুনানি হয়েছে। সেসব মামলার মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও মিশুক মনিরের মামলা এবং ময়মনসিংহের ত্রিশালের পৌর এলাকায় ট্রাকের চাপায় গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা শিশুর জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া মামলাটি বেশ আলোচিত। গ্রীনলাইন পরিবহনের আঘাতে পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে আদালতের রায় মেনে দেওয়া হয়েছে ক্ষতিপূরণ। তবে সড়কে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ চেয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ না হয়েও এ সংক্রান্ত ট্রাস্ট্রি বোর্ডের কাছে যাওয়ার আইনগত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন বলেন, সড়কে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে দেশীয় আইনে বলা আছে। বিআরটিএ’তে একটি ট্রাস্ট্রি বোর্ড আছে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু ভিকটিমকে কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে সে বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট হতে হবে। কেননা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের কোনও প্যারামিটার দেওয়া নেই। ক্ষতিপূরণ কে নির্ধারণ করবে? এটি আমাদের জন্য স্বচ্ছ করা প্রয়োজন।