বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে বিএসটিআইয়ের আলোচনা ॥ চার হাজারের বেশি পণ্যের মান নির্ধারণ, ২২৯টিতে বাধ্যতামূলক কিউআর কোড

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের বাজারে থাকা চার হাজারের বেশি পণ্যের মান নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড আ্যন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বিএসটিআই। তবে বাজারে বর্তমানে কতটি পণ্য রয়েছে সেটি জরিপ করে নির্ণয় করতে হবে।
পণ্যের মান নির্ণয়কারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বলছেন, বাজারে পণ্যের মান নিশ্চিত করতে ৮৯টি পরীক্ষাগার করা হচ্ছে। ২২৯টি পণ্যে বাধ্যতামূলক কিউআর কোড দেওয়া হবে। এছাড়া মানহীন পণ্যের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চালু হয়েছে বিএসটিআই হটলাইন।
১৪ অক্টোবর ছিল বিশ্ব মান দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রবিবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে বিএসটিআই ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএসটিআই। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক জনেন্দ্র নাথ সরকার এসব তথ্য দেন।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন। উপস্থিত ছিলেন শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। অন্যদের মধ্যে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যের মানের আগে দেশের মান নিয়ে চিন্তা করি। দেশ কোথায় ছিল আর এখন বিশেষ মানে পৌঁছে গিয়েছে। আমাদের চামড়া, পোশাক থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্য সবকিছুর মানোন্নয়নে উদ্যোগ নিতে হবে। ফুড প্রসেসিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ফুড পণ্যের ডাইভারসিফিকেশন করতে হবে।’
নূরুল মজিদ বলেন, ‘দেশে কতটি পণ্য আছে আর সেগুলির মধ্যে কতটি বিএসটিআইয়ের মান সার্টিফাইড দেখতে হবে। সব পণ্য মানসম্পন্ন কিনা তা হিসাব-নিকাশের আওতায় আনতে হবে।’
এসময় তিনি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ব্যবসায়ীদের উন্নত মানসিকতা নিয়ে ব্যবসা করার পরামর্শ দেন।
বিএসটিআইকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে গড়েছেন উল্লেখ করে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বিএসটিআইয়ের কার্যালয় থাকত।’
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামে আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ বিএসটিআইয়ে পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় খুব শিঘ্রই চালু হচ্ছে। এখন থেকে আর ঢাকায় এসে পণ্যের মান যাচাইয়ে সময়ক্ষেপণ হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান ঠিক থাকলে আমরা সবাই লাভবান হব। রাজনৈতিক প্রভাবে যেন খারাপ পণ্য বিদেশে রপ্তানি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বাজার সিন্ডিকেটের প্রতি জোর নজর রাখতে হবে। যারা পণ্যের মানে ঠকায় তারা মানুষের রক্ত পান করতেও দ্বিধা করে না।’
এসময় তিনি পাইকারি বাজারে এক পাল্লা বেগুনের দাম দেড়শ টাকা কিভাবে খুচরা পর্যায়ে এসে কেজিতে দেড়শ টাকা হয় সেই প্রশ্নও তোলেন।
বিএসটিআই পণ্যের মানই নয় ওজন নিয়েও কাজ করে জানিয়ে শিল্প সচিব বলেন, ‘বিএসটিআইয়ে নামের অপব্যবহার করা হচ্ছে। একারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এটি বন্দ্ব করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে বিএসটিআই কর্মকর্তারা শিগগির জার্মানি যাবে।’
বিদেশিদের জন্য মানসম্পন্ন পণ্য বাংলাদেশ থৈরি করে দিলেও দেশের মানুষের জন্য সেটি কেন হচ্ছে না প্রশ্ন রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন।
এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রিভিউ ঠিক না থাকলে এখন আপনার প্রতিষ্ঠানে কেউ যাবে? বর্তমানের ছেলেমেয়েরা কিন্তু অনেক অগ্রসর। বিদেশিদের জন্য কোয়ালিটি সম্পন্ন পণ্য আমরাই বানিয়ে দিচ্ছি। অথচ নিজেদের বেলায় কোয়ালিটি থাকে না!’
দেশে কোল্ড চেইন না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে জসিম উদ্দিন বলেন, কোল্ড চেইন তৈরি করতে দেশের নানা প্রান্তে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। চট্টগ্রামের ল্যাব আধুনিক করতে হবে। পণ্য পরীক্ষা করতে যেন ঢাকায় আসা না লাগে। কৃষি পণ্যের জন্য প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি প্রয়োজন। সারা দেশে এই প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে হবে।’
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করা কৃষিপণ্য কেবল সেখানকার অভিবাসী বাংলাদেশিরাই কেনেন। এই তথ্য জানিয়ে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কেন সেসব পণ্য লন্ডনের মার্কেটে বিক্রি হয় না সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। এখন পার্টনারশিপে কাজ করতে হবে।’
আইএসও সনদ অনুযায়ী সব পণ্যের মান নিশ্চিত করা গেলেই জনস্বাস্থ্য ঠিক থাকবে জানিয়ে বিএসটিআই মহাপরিচালক বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যদি পণ্যের মান যথাযথ রাখেন তাহলে ভোক্তারাও সঠিক পণ্য ভোগ করতে পারবেন। ব্যবসায়ীদের জন্য বিএসটিআই ই-অ্যাপ্লিকেশন করেছে। তারা এর মাধ্যমে পণ্যের মান বিষয়ে জানাতে পারবেন। এতে ব্যবসা করতেও সহজ হবে।’