লঙ্কানদের হারিয়ে সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন ভারতের মেয়েরা

8
আজ চূড়ান্ত প্রতিবেদন ॥ চাকরিচ্যুতিসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে গ্রিড বিপর্যয়ে দায়ীদের কোনো রেহাই নেই স্বপ্না চক্রবর্তী প্রকাশিত: ২৩:২৬, ১৫ অক্টোবর ২০২২ AddThis Sharing Buttons Share to Facebook Share to TwitterShare to WhatsAppShare to LinkedInShare to PrintShare to More গ্রিড বিপর্যয়ে দায়ীদের কোনো রেহাই নেই গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয় চলতি মাসের শুরুতে গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয়। প্রায় ৭ ঘণ্টা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে দেশের বেশিরভাগ এলাকা। আর এই বিপর্যয়ের কারণ গুটিকয়েক কর্মকর্তা। বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এই সংকটের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) কয়েকজন কর্মকর্তা দায়ী। তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কয়েকজন কর্মকর্তার দায়ভার রয়েছে এ ঘটনায়। তাদের অবহেলার কারণেই অন্ধকারে ডুবে যায় দেশের অধিকাংশ এলাকা। আর তাই ভবিষ্যতে কেউ যেন দায়িত্বে অবহেলা করতে না পারে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতিসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজ চূড়ান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন পূর্বাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি ছিল আর পশ্চিমাঞ্চলে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বাড়তি ছিল। সমন্বয় করতে পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে সঞ্চালন করা হচ্ছিল ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ঘটনার সময় আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশাল এআইএস থেকে ঘোড়াশাল জিআইএস এলাকায় ২৩০ কেভি একটি সার্কিট ট্রিপ করে। বন্ধ হয়ে যায় দুই অঞ্চলের বৈদ্যুতিক সংযোগ। ফলে পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায়। আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সিজনিত কারণে গ্রিড আনস্ট্যাবল হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ট্রিপ করে বিভ্রাটের সৃষ্টি করে। আর এতেই ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। যার প্রভাব এখনো কাটেনি পুরোপুরি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে এখনো পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ পূবাঞ্চলে যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং পরিস্থিতিও পুরোপুরি স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা প্রকাশ করে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। ওই দিন ডেসকোসহ এনএলডিসি, পিডিবি, পিজিসিবির কয়েকজন কর্মকর্তার অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। রবিবার (আজ) আমাদের হাতে প্রতিবেদন আসবে। তারপরই আপনাদের বিস্তারিত জানাতে পারব। এদিকে গ্রিড বিপর্যয়ের বিষয়ে শুক্রবার রাতে এক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এ ঘটনায় ‘ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি’ ছিল। এর পেছনে সঞ্চালন কোম্পানি পিজিসিবি কর্মকর্তাদের দায় রয়েছে। বড় ধরনের এ বিভ্রাটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার অংশ হিসেবে রবিবারই (আজ) কয়েকজনকে ‘চাকরিচ্যুত’ করা হবে। তিনি বলেন, এখনো ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেড চলছে। কিন্তু ওয়েস্টার্ন ব্লক থেকে যদি ৭০০ মেগাওয়াট নিয়ে আসতে পারতাম, তাহলে লোডশেডিং থাকত না। ওইদিনের বিপর্যয়ের কারণে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বর্তমানে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কোনো সমস্যাই থাকত না বলে দাবি করেন তিনি। কী কারণে ওয়েস্টার্ন ব্লক থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা যাচ্ছে না- এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এটা হচ্ছে ঘোড়াশাল গ্রিড উপকেন্দ্রে ম্যানফল্ট বা আমি মনে করি হিউম্যান ফল্টের কারণে। আমরা আজকেও এটা নিয়ে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারে বসেছিলাম। তিনি বলেন, আমাদের যে ব্ল্যাকআউটটা হয়েছিল, সেটা পিজিসিবি তার ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল, সে কারণেই হয়েছে। সেদিন ডিমান্ড উৎপাদনের চেয়ে বেশি ছিল। তাদের ডেসকো থেকে বলা হয়েছিল যে, তোমরা কাট ডাউন কর। অন্যথায় তোমরা বাধাগ্রস্ত হবে। ফ্রিকোয়েন্সি আরও উপরে উঠে গিয়ে ক্র্যাশ করবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। ওরা কথাটা শুনে নাই। ওরা কন্টিনিউ করেছে, একপর্যায়ে ব্ল্যাক আউট হয়ে গেছে। এ ঘটনায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানি পিজিসিবি কর্মকর্তাদের দায় রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ কারণে আমরা কতগুলো মানুষকে চিহ্নিত করেছি, যারা কথাগুলো শুনতে চেষ্টা করেনি। এদের আমরা বরখাস্ত করব। রবিবারের (আজ) মধ্যেই ব্যবস্থা নেব। এটা কোনো টেকনিক্যাল ফল্ট ছিল না। ম্যানেজমেন্টের ফল্ট ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থিতিশীল গ্রিডের জন্য অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মানুষের বদলে যত বেশি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, গ্রিড ততই স্থিতিশীল হবে। তবে এর জন্য বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু এর জন্য দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কর্মীরও প্রয়োজন। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুতের উৎপাদন থেকে সঞ্চালন ও বিতরণ এই তিন জায়গাতেই সমান গুরুত্ব দেয়ার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ি, রূপপুরের সব ইউনিট ২০২৪ এবং ২০২৫-এর মধ্যে উৎপাদনে চলে আসবে। এর মধ্যেই গ্রিড স্থিতিশীল না করতে পারলে বিপর্যয় আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কোনো কারণে একটি এক হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র আকস্মিক বন্ধ হয়ে গেলে গ্রিড সংকটে পড়তে পারে দেশ। পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্রিড বিপর্যয় রোজকার কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু এই বিপর্যয় রোধ করতে হলে যে পরিমাণ আধুনিকায়ন প্রয়োজন তা আমরা করে উঠতে পারছি না। এজন্য বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন। যার সংস্থান আবার একদিনে করা সম্ভব না। সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ জনবলও জরুরি। না হলে যতই যান্ত্রিক করা হোক না কেন বিপর্যয় ঘটতেই পারে। তিনি জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদনের পর বিদ্যুৎ গ্রিড সাবস্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এই জাতীয় গ্রিড দেশের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার গ্রিড সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়। এই গ্রিড সাবস্টেশন এবং জাতীয় গ্রিড দুটোরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পাওয়ার গ্রিডের হাতে। গ্রিড সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় বিতরণ কোম্পানির সাবস্টেশনে। বিতরণ কোম্পানির সাবস্টেশন থেকে মানুষের বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছায়। বিতরণ জটিলতার কারণে সাধারণত গ্রিড বিপর্যয় ঘটে না। বিপর্যয় ঘটে সঞ্চালন জটিলতার কারণে। আর এতে যে কোনো এক জায়গায় একটা ছোট্ট ভুলও মারাত্মক হয়ে দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, গ্রিড বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের ভারসাম্য না থাকা। অর্থাৎ কখনো চাহিদা রয়েছে ১০ হাজার মেগাওয়াটের, কিন্তু উৎপাদন হঠাৎ আট হাজার মেগাওয়াটে নেমে গেল, অথবা ১২ হাজারে উঠে গেল। এরকম হলে বিদ্যুৎ প্রবাহের তরঙ্গে বিঘ্ন ঘটে, সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। কখনো যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে সেই সমাধান কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যে করতে হয়। অর্থাৎ চাহিদার চাইতে যদি হুট করে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাৎক্ষণিক সরবরাহ বন্ধ করলে আর গ্রিড বিপর্যয় ঘটে না। এ ধরনের সংকট সমাধানে সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থায় ক্যাপাসিটর ব্যাংক বসানো থাকে। তবে মাঝে মাঝে সেগুলোও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে না। তাই প্রত্যেকটা কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, আমাদের গ্রিড সম্পূর্ণ অটোমেটেড না। অটোমেটেড হলে মানুষের ওপর পুরো নির্ভরশীল হতে হতো না। মেশিনই বলে দিতো ত্রুটি কোথায়। এজন্য আর তদন্ত কমিটি করে ত্রুটি খোঁজার প্রয়োজন হতো না। অন্যদিকে এখন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করে লোড কমানো-বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তখন মেশিনেই সেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। তাই দায়িত্বশীলতা খুবই জরুরি। কারো অবহেলায় যদি এমন বিপর্যয় ঘটে থাকে তাহলে অবশ্যই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে আরো বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

স্পোর্টস ডেস্ক :
নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করল ভারতের মেয়েরা। এটি তাদের সপ্তম শিরোপা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে মাত্র ৬৫ রান তুলে লঙ্কানরা। জবাবে ৬৯ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে ভারত।
নারী এশিয়া কাপের আটটি আসরের সবকটিতেই ফাইনালে উঠেছে ভারত। প্রথম ছয় আসরে টানা ছয়বার শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছিলো দল। সপ্তম আসরে ভারতকে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। এবার ফের শিরোপা নিজেদের করে নিল ভারত।
শ্রীলঙ্কার দেয়া ৬৬ রানের মামুলি টার্গেট ব্যাট করতে নেমে ৫ রানে ফেরেন ওপেনার শেফালি ভার্মা। আর ২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন জেমিমা রদ্রিগেজ। এদিকে দলনেতা হার্মানপ্রিত কৌরকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ওপেনার ওপেনার শ্রীমতি মান্ধানা। মাত্র ২৫ বলে ছয়টি চার ও তিনটি ছয়ে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন মান্ধানা। আর ১১ রানে মাঠ ছাড়েন কৌর। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে টস জিতে প্রথম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন শ্রীলঙ্কার দলনেতা হামারি আতাপাতু। ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের সামনে দাাঁড়াতেই পারেননি লঙ্কান ব্যাটাররা। রান তো তুলতেই পারছিলেন না, সেই সঙ্গে পড়ছিল একের পর এক উইকেট।
দশের ঘর স্পর্শ করতে পেরেছেন মাত্র দুজন ব্যাটার। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ ১৮ রানের ইনিংসটি খেলেন ইনোকা রানভিরা। ১২ রান করেন ওসাদা রানাসিংহে। আর বাকি ব্যাটাররা আউট হয়েছেন দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করার আগেই।
ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন রেনুকা সিং। এছাড়া দুটি করে উইকেটের দেখা পেয়েছেন স্নেহা রানা ও রাজেশ্বরী গায়কোয়াড।
মাত্র ৫ রানের খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন রেনুকা সিং। আর পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ৯৪ রান এবং বল হাতে ১৩ নিয়ে সিরিজসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার দিপ্তী শর্মা।