শেখ হাসিনার সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে – মির্জা ফখরুল

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ দেশে কোনো মানুষের নিরাপত্তা নেই। দিনে দুপুরে ডাকাতি হয়।
মা মেয়েদের কোনো সম্ভ্রম রক্ষা হয় না। মানুষকে হত্যা ও গুম করে। এমন একটা অবস্থা এসেছে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের একটা প্রতিষ্ঠানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে। আমি বলি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে শেখ হাসিনার সরকারকে। কারণ হাসিনা সরকারের নির্দেশেই এসব ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, পুলিশের গুলিতে ৫ নেতাকে হত্যা ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, কাস্টডিতে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে এই সরকারের আমলে। ওনারা নাকি কিছু জানেন না। গুম কি হয়েছিল তাও নাকি বলতে পারেন না। অনেকে বলে লুকিয়ে আছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের লোকজন কিছুদিন আগে এসে বলেছেন, এখানে গুম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ পৃষ্ঠার রিপোর্টেও তারা বলেছেন বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। দেশে গুম হয়, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। এখানে বিচারবিভাগ স্বাধীন নয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে একটি পার্লামেন্ট গঠন করা হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার হবে সব দলগুলো সঙ্গে নিয়ে জনগণের পার্লামেন্ট। সব দল বলতে যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে তাদের নিয়ে হবে। আমরা এই কথা বলতে পারি, সেই সরকার গঠন করা হলে আমরা এই দেশে যত সমস্যা আছে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো। চাল, ডাল, তেল বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করবো। বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করবো। আমরা শুনতে পাচ্ছি বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। সবকিছুর দাম বাড়াতে হয় কেন? কারণ একটাই তারা লুট করে, চুরি করে ডাকাতি করে। জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে। কানাডা, লন্ডন ও মালয়েশিয়ায় বাড়ি করে। আর আমার দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যায়। খুব বড় বড় কথা বলে। কিন্তু দেশের শতকরা ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে।
সারাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটাই কাজ, তা হচ্ছে জনগণের পকেট কেটে অর্থ কামিয়ে বিদেশে পাচার করা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সেই বাংলাদেশ চাই। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা ১৯৭১ সালে দেখেছিলাম। যার স্বপ্ন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া দেখেছিলেন। শেখ হাসিনা আপনি পদত্যাগ করেন। আজকে থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই অন্দোলন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেবো। সেই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকে অবশ্যই পতন ঘটাবো এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।
চট্টগ্রামে আন্দোলন শুরু হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশকে মুক্ত করার জন্য, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, এই দেশকে আরেকেবার পরাজয় থেকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে শুরু করেছি গণতন্ত্রকে মুক্ত করার আন্দোলন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন৷ বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। আর এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই সরকারকে, শেখ হাসিনাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। কারণ তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। শেখ হাসিনা বলে, দুর্ভিক্ষ আসতেছে, কম খান। বাতি কম জ্বালান, পানি কম ব্যবহার করেন। এসব কথা বলছে এখন। আপনারা আছেন কেনো? বিদায় হন। আমি আগেই বলেছি সেভ এক্সিট করেন। নিরাপদে চলে যান। তা না হলে পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না। এই সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। সেজন্য আমরা বলেছি অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে। আমরা বলেছি বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধায়কের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার এখানে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এক করে জনগণের নিকট নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন করবে। সেই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্ট গঠন হবে। সেই সরকার হবে জনগণের সরকার।
খালেদা জিয়া গৃহবন্দী, চিকিৎসারও সুযোগ পাচ্ছেন না জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কতটা নিকৃষ্ট হতে পারেন তারা। তারা বলে আমরা কথা বললে, খালেদা জিয়াকে আবার জেলে নেবে। খালেদা জিয়া কখনো জেলের ভয় পান না। বাংলাদেশের মানুষ জেলের ভয় পায় না। এরা আবার নির্বাচন করতে চায়। নির্বাচন করতে একটা ইলেকশন কমিশন গঠন করেছেন। কোন নির্বাচন কমিশন?
নির্বাচন কমিশনকে ডিসি এসপি মানে না জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের ডাকছে। নির্বাচন কমিশনার তাদের বলছে নির্বাচন ঠিক করে করবেন। ডিসি এসপিরা বলছে, আপনার কথা আমরা মানি না। আমরা শুধু শেখ হাসিনার কথা মানি। তাদের দিয়ে আপনি নির্বাচন করবেন। এই দেশের মানুষ নির্বাচন হতে দেবে না। এখানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। তাই আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, সেই কারণে আন্দোলন শুরু করেছি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা.শাহাদাত হোসেন সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আবুল হাসেম বক্করের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এসএম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনর রশীদ, সহ গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী প্রমুখ।