সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ॥ এলাইছ মিয়া মতিনের ষড়যন্ত্রের শিকার চেয়ারম্যান শেরীন ॥ ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মিথ্যা

21
নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখছেন আবাসন এসোসিয়েট ও আবাসন ডেভেলপার (প্রা:) লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো: মাহবুবুল হক শেরীন।

স্টাফ রিপোর্টার :
আবাসন অ্যাসোসিয়েট ও আবাসন ডেভেলপারস লিমিটেডের চেয়ারম্যানকে মিথ্যা, সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেফতার করে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। তিনি ও তার পরিচালকরা গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। এলাইছ মিয়া মতিনের পরিকল্পনায় এসব নাটক সাজানো হয়েছে। নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মাহবুবুল হক শেরীন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, দুই কোম্পানির পরিচালকরা মাত্র ১৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন; যা ভূমি ক্রয় ও আবাসন উন্নয়নে খরচ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব ভূমির বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৪০ কোটি টাকা, যা এখনও বিক্রি হয়নি। এ থেকে প্রমাণ হয় ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে।
মাহবুবুল হক শেরীন জানান, তিনি ছাড়াও সাবেক এমডি সিলেটের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আব্দুল হামীদ এবং প্রকল্প পরিচালক মো. নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে যা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবশ্য আমি তিন দিনের মাথায় জামিনে মুক্ত হয়ে ফিরে এসেছি। আমার এই গ্রেফতার এবং হাতকড়াসহ ছবি যারা প্রচার করে নাটক সাজিয়েছে তাদের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি। শুধুমাত্র আমার সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানহানির জন্যই এই সাজানো এবং মিথ্যা মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যা আমার প্রতি অন্যায় এবং জঘন্য আচরণ করা হয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডি অফিসে থাকা অবস্থায়ই প্রতিপক্ষ চক্রের একজন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ছবি ক্যাপশনসহ পোস্ট করেন। যার মাধ্যমে তাকে হেয় করা হয়েছে, তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। একইসঙ্গে, এ নাটক যে সাজানো তা প্রমাণ হয়েছে।
চেয়ারম্যান শেরীন বলেন, আমাকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত। আমার নামে কোনো ওয়ারেন্ট ছিল না। মামলার তদন্তের জন্য পুলিশ যখন যে জিনিসের প্রয়োজন মনে করেছে তা প্রদান করেছি। ডাকলে যে কোনো সময় আমি অফিসে হাজির হয়েছি।
তিনি বলেন, যে সব ধারায় আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তার সবকটিই জামিনযোগ্য। আমাকে গ্রেফতার করার পর ছবি উঠানোর সময় এসপি আমাকে হ্যান্ডকাপ লাগাননি। আমাকে কোর্টে চালান দেওয়ার আগ মুহূর্তে ইন্সপেক্টর মোবাশ্বের দ্বিতীয় দফায় আরও কয়েকটা ছবি তুলেন এবং হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভঙ্গিতে ছবি তুলেন। এসব ছবি ছড়িয়ে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
মাহবুবুল হক শেরীন বলেন, আবাসন অ্যাসোসিয়েট এবং আবাসন ডেভেলপারসের ৬৮ জন পরিচালকের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন লোক মিথ্যা মামলা, হুমকি-ধমকির মাধ্যমে এক বছর ধরে অশান্ত পরিবেশ তৈরির তৎপর চালাচ্ছেন। তারা কোম্পানির নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যুক্তরাজ্যে বসে কোম্পনিকে গভীর সংকটে ফেলতে মরিয়া। অথচ তারাও জানে যে, এই কোম্পানির চেয়ারম্যন হিসেবে কোম্পানির ভূমি ও সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে আমি ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করেছি।
তিনি বলেন, বেপরোয়া ধান্দাবাজ মহল আমাকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছি বলে জঘন্য মিথ্যাচার করছে। এই কোম্পানির সব পরিচালকের টাকা দিয়ে শুধু ভূমি কেনা হয়েছে। আমাদের টাকা এবং সম্পদের মিল রয়েছে। এই ব্যাপারে পরিচালকদের মাধ্যমে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট কর্তৃক অডিট করে টাকা আত্মসাতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে কোম্পানির সব পরিচালক একমত রয়েছেন।
বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা এবং প্রবাসীরা বিনিয়োগ বিমুখ হওয়ায় সব পরিচালক মার্কেট নির্মাণ না করে ভূমি বিক্রি করে নিজেদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিতে ঐক্যমত পোষণ করেছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘ভূমি বিক্রি করতে দীর্ঘ দিন থেকে ক্রেতা খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু ভূমি এখনও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
সবকিছুর পেছনে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এলাইছ মিয়া মতিন কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘তার মাধ্যমে আমি ড্রিমল্যান্ড, ভেলিসিটি, হলি সিটি, সাইফাবাংলা এবং ড্রিমল্যান্ড ওয়াটার ওয়ার্ল্ড নামক প্রতিষ্ঠানে এক কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ করেছি। বিনিয়োগের বিশাল অংকের টাকার কোনো হিসাব আজ পর্যন্ত পাইনি। তিনি অনেকবার আমাকে সরিয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান হতে চেয়েছেন। এমন নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শেরীন আরও বলেন, মতিন চরম হিংসাপরায়ণ হয়ে তার অনুগত দুই পরিচালককে সাথে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করান। এর মধ্যে একটি মামলার বাদী আনিসুল হক চৌধুরী। আরেকটি মামলার বাদী এনায়েতুর রহমান খান রাসেল। তার ছোট ভাই রতন আমার কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কানাডা পালিয়ে গেছে। এষন উল্টো রাসেল আমাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। অপর আরেকটির মামলার বাদী আবুল কালাম আজাদ ছোটন। তার মাধ্যমে এবিসি ল্যান্ড নামক একটা কোম্পানির আমি ডিরেক্টর হই। কোনো হিসাব-নিকাশ বা বোর্ড মিটিং ছাড়াই তারা জায়গা বিক্রি করে দিয়েছেন। কত টাকায় জায়গা বিক্রি হয়েছে?- পুরো হিসাব চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তখন থেকেই তিনি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। অন্য আরেকটি মামলার বাদী ফয়সাল আহমদ। তিনি এনায়েতুর রহমান খান রাসেল ও এলাইচ মিয়া মতিনের খুবই ঘনিষ্ঠজন। মামলা কেনো করেছেন তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে, এলাইচ মিয়া মতিন ও এনায়েতুর রহমান খান রাসেল চক্রের কথায় মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন।
এই নাটক ও হয়রানিতে জামিল চৌধুরী নামের এক ব্যক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান শেরীন। একই সাথে তিনি কোম্পানির পরিচালকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।