আর্থিক সংকটে নয়াসড়ক জামে মসজিদের নির্মাণ কাজ ধীর গতি

60

সিলেট মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র নয়াসড়ক জামে মসজিদের ছয় তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মাণ কাজ আর্থিক সংকটে ও মোতাওয়াল্লী নিয়োগ জটিলতায় সাড়ে ৩ বছর ধরে ধীর গতিতে চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
কয়েক বছর আগে তুরস্ক প্রতিনিধি দলটি নয়াসড়ক জামে মসজিদটি পরিদর্শন করে যায়। বর্তমানে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ৬তলা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করতে আর্থিক সংকটে ভোগছেন। মসজিদ কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নয়াসড়ক জামে মসজিদটি আধুনিক মানের করতে সকলেই একমত হন। এরপর তুরস্ক থেকে একটি প্রতিনিধি দল এসে মসজিদ পরিদর্শন করে যায়। প্রতিনিধি দলটি এই মসজিদ নির্মাণ করবে বলে আশ্বাস দেয়নি। সেজন্য মসজিদ নির্মাণে তুরস্কের সাহায্যের প্রশ্নই উঠে না। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নয়াসড়ক জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে টেন্ডারের মাধ্যমে নয়াসড়ক জামে মসজিদে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেলটেক কোম্পানী নামক একটি প্রতিষ্ঠান মসজিদ ভবন নির্মাণের কাজ পায়। মসজিদের আধুনিক ৬তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ও ড্রয়িং-ডিজাইন বাবদ ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। মসজিদের আধুনিক ৬তলা ভবন নির্মাণে মোট ১৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলোও ব্যয়ের পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণ করা হচ্ছে।
সাড়ে ৮ হাজার বর্গফুট স্কয়ার বিশিষ্ট ৬ তলা মসজিদ ভবনের আন্ডার গ্রাউন্ট সহ এক তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেন, মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরো ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমানে মসজিদের হিসাব ফান্ডে প্রয়োজনীয় টাকার অভাব রয়েছে। সে কারণে চলমান কাজের ২য় তলা নির্মাণ করতে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছেন। নয়াসড়ক জামে মসজিদ জানু বিবি ওয়াকফ এস্টেট এর অন্তর্ভুক্ত।
জানু বিবি পরিবারের অন্যতম ওয়ারিশ এম.এ মুবিন বলেন, বিগত ২০২০ সালের নভেম্বরে মসজিদের মোতাওয়াল্লী আব্দুল মালিক রাজা মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে মোতাওয়াল্লী পদ শূন্য রয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে মসজিদের নতুন মোতাওয়াল্লী আব্দুল ওয়াহাব রানাকে নিযুক্ত করতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ শাহী ঈদগহে অবস্থিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াকফ এস্টেট সিলেট-সুনামগঞ্জের পরিদর্শক ইন্সপেক্টর এর কাছে একটি দরখাস্ত দেয়া হয়। কিন্তু সেটি দেড়বছর ধরে লাল ফিতায় বন্দী থাকায় মসজিদের নির্মাণ কাজ, ফান্ড সংগ্রহ সহ জানু বিবি ওয়াকফ এস্টেট ভুক্ত নয়াসড়ক জামে মসজিদের অধিনস্থ সিলেট নগরীর মিরবক্সটুলা ও মহাজনপট্টিতে কয়েকটি কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা মোকাদ্দম চলছে। কিন্তু মোতাওয়াল্লীর অভাবে আইনী ভাবে মসজিদ কর্তৃপক্ষ কোন কিনারা করতে পারছে না।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলেন, প্রতি শুক্রবার জুম্মার দিনে প্রচুর সংখ্যক মসল্লি নামাজ পড়তে আসেন। এছাড়া মসজিদে নিয়মিত মানিকপীর কবরস্থানে লাশ দাফনের জন্য ঘন ঘন জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। সেকারণে মসজিদে মসল্লিদের নামাজের স্থান সংকুলান করা যাচ্ছে না।
নয়াসড়ক নিবাসী মরহুম সফর উল্লাহ সওদাগরের স্ত্রী জানু বিবি ওয়াকফ এস্টেট এর উদ্যোগে ১৯১১ সালে মসজিদ নির্মিত হয়।
এ ব্যাপারে নগরীর শাহী ঈদগহে অবস্থিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াকফ এস্টেট সিলেট-সুনামগঞ্জের পরিদর্শক ইন্সপেক্টর আলহাম আব্দুল্লাহ বলেন, নয়া সড়ক জামে মসজিদের নতুন মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হওয়ার আবেদনটি তিনি পেয়েছেন। শীঘ্রই এ বিষয়টি সমাধান হবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ রাশেদ বলেন, মসজিদের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে চলছে। মেয়রের নামে হিসাব খোলা আছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী (সিভিল) রাজি উদ্দিন খান বলেন, প্রতি তলায় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার স্কয়ার ফিট বিশিষ্ট ৬তলা ভবন তৈরী হবে। নির্মাণাধীন মসজিদটির কাজ তদারকির দায়িত্ব তিনি পালন করছেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মোঃ তালহা (জুনেদ) এর কাছে জানতে চাইলে বলেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নয়া সড়ক জামে মসজিদ ভাঙ্গার মাধ্যমে মসজিদের ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শুরু হয়। এই কাজটি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় টেন্ডারের মাধ্যমে শেলটেক কোম্পানী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মসজিদ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। মসজিদের উন্নয়ন কাজ করতে সিলেট সিটি কর্পোরেশন বিগত ২/৯/১৯ ইংরেজি তারিখ মোতাবেক একটি একাউন্ট খোলা হয়। উক্ত একাউন্টে টাকা সংগ্রহের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন মসজিদের মিম্বর স্থানে গম্বুজ ৯০ ফিট, এক সঙ্গে ৩টি লাশ রাখার ব্যবস্থার জন্য একটি প্লেট এলিভেট ও একটি লিফট সুবিধা রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত মসজিদ নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ৯০ হাজার ৫১৪ টাকা। দেশের চলমান নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদের নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে আরো ব্যয় বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই হিসেবে মসজিদ নির্মাণ করতে ১৪ কোটি হতে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। সিটি কর্পোরেশন ও পাবলিক খাত থেকে গত ৩১ আগষ্ট ২০২২ ইংরেজি পর্যন্ত মসজিদ নির্মাণ কাজে ৫ কোটি ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬১২ টাকা বিভিন্ন খাত থেকে পাওয়া যায়। খাতগুলোর মধ্যে পুরাতন মসজিদ ভবন বিক্রি থেকে ৪ লক্ষ টাকা, পাবলিক খাত থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৫ টাকা, প্রতি শুক্রবার মুসল্লির দান থেকে আয় ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৫ টাকা, দান বক্স থেকে ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৯৭ টাকা। এছাড়াও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৯৬ হাজার ১৩৮ টাকা। সর্বমোট ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৫ টাকা ব্যয় হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শেলটেক কোম্পানী এখনো ২ কোটা পাওনা রয়েছে।
বর্তমানে মসজিদের উন্নয়ন কাজ টাকার অভাবে ধীর গতিতে চলছে। (খবর সংবাদদাতার)