হত্যা মামলায় ২ জনের আমৃত্যু ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৪ জন খালাস

64

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে শ্রমিক মেরাজ আলী হত্যা মামলায় ২ জনের আমৃত্যু পর্যন্ত কারাদন্ড ও একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং অপর ৪ আসামীকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মো: ইব্রাহিম মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো: সোহেল রানা।
আমৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছেন, কোম্পানীগঞ্জ থানার তেলীখাল নয়াগাঁও শিমুলতলীর মৃত আব্দুল করিমের পুত্র বর্তমানে ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মো: জাকারিয়া হোসেন (২২) ও সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গণেশপুর গ্রামের হামিদুল হকের পুত্র আক্তার হোসেন উরফে আক্তার উদ্দিন উরফে মাইকেল উরফে ইনু (২০) এবং যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হচ্ছেন, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রামের আব্দুল গণির পুত্র মো: খালেদ মিয়া (২২)। বর্তমানে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভোলাগঞ্জ গুচ্ছুগ্রামের হানিফ আলীর পুত্র সুহেল মিয়া (২১) তার সহোদর রুহেল মিয়া (১৯), একই গ্রামের মো: মাসুদ খানের পুত্র পারভেজ খান (২৩) এবং সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার শক্রমর্দন পাগলা গ্রামের ময়না মিয়ার পুত্র বর্তমানে ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মিলন (২০)।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ থানার পাড়ুয়াবাজার এলাকার নোয়াগাঁও জাতিরটুক গ্রামের মো: আব্দুস ছালামের পুত্র দিনমজুর (শ্রমিক) মো: মেরাজ আলী (২৩)’র সহিত সুহেল মিয়া, পারভেজ খানের ঘটনার পূর্ব থেকে ঝগড়া-ঝাটি চলে আসছিলো। এর কারণে আসামীদের সাথে মেরাজ আলীর মনমানিল্য সৃষ্টি হয়। ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী রাত ৯ টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় কাজ শেষে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারী হতে বাড়ী ফেরার পথে কোম্পানীগঞ্জ থানা এলাকার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পিলার নং ৪৭/১৫-এস এর পাশে পশ্চিম হাটিবন্দের মধ্যে পিলারের ৩/৪ হাত দুরে পৌছামাত্র আসামী সুহেল মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন দুর্বৃত্ত মেরাজ আলীকে ধারালো চোরা দিয়ে বুকে, পিটে উপর্যুপরি কুপিয়ে আঘাত করে। এ সময় মেরাজ আলী দৌড়িয়ে ১০০ গজ দূরে গেলে সে মাটিতে লুটে পড়ে গিয়ে তার মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত মেরাজ আলীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় নিহত মেরাজ আলী মা মোচ্ছা: পতিঙ্গা বেগম বাদি হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১৩ (১৭-০২-২০১১)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই জগদীশ চন্দ্র দাশ ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-১৪৭) দাখিল করেন এবং ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারী চার্জগঠন করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল মঙ্গলবার আদালত আসামী মো: জাকারিয়া হোসেন ও আক্তার হোসেন উরফে আক্তার উদ্দিন উরফে মাইকেল উরফে ইনুকে ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদেরকে আমৃত্যু পর্যন্ত কারাদন্ড এবং একই ধারায় অপর আসামী মো: খালেদ মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এডিশনাল পিপি এডভোকেট রনজিৎ চদ্র সরকার ও আসামীপক্ষে এডভোকেট ড. ফৌজিয়া ইসলাম এবং এডভোকেট মোস্তফা দিলওয়ার আল আজহার মামলাটি পরিচালনা করেন।