হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন

13

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের বিয়ানীবাজার এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার দায়েরকৃত মামলায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদেরকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ড দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক শায়লা শারমিন এ রায় ঘোষনা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে, বিয়ানীবাজার থানার বরইআইল গ্রামের মৃত নামই মিয়া উরফে মলই মিয়ার পুত্র নিজাম উদ্দিন (৩৬), একই থানার মান্দারগ্রাম দক্ষিণের মৃত ফয়েজ আলীর পুত্র মো: রিয়াজ উদ্দিন (২৮), দক্ষিণ চক্রবাণী গ্রামের মৃত আং রউফের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম উরফে আলম (৩০), একই গ্রামের মৃত ময়না মিয়া উরফে ময়না ডাকাতের পুত্র মো: রেদওয়ান আহমদ (২৬), জকিগঞ্জ থানার শরিফাবাদ প্রকাশ লোহার সাঙ্গনের হেলাল উদ্দিন উরফে হেলাল ডাকাতের পুত্র জাকির হোসেন (২৫)। বর্তমানে দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নিজাম উদ্দিন পলাতক থাকলেও বাকি আসামীরা গতকাল রায় ঘোষনার সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। অপর আসামী কানাইঘাট থানার জয়পুর গ্রামের ছৈইদুর রহমান উরফে গুটাই মিয়ার পুত্র ছয়ফুল আলম উরফে আলম (৪০) মামলা চলাকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ জুন রাত ৩ টার দিকে ৮ সদস্যের হাফ প্যান্ট পরিহিত সহস্ত্র এক দল ডাকাত বিয়ানীবাজার থানার চক্রবাণী গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুল মতিনের পুত্র আজমল হোসেনের বসতঘরের দরজার চিটকারি ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় ডাকাত দল চাকু, ছুরা ও রামদার ভয় দেখিয়ে আজমলের স্ত্রী রোকসা বেগমের কাছ থেকে ৫ আনা ওজনের একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ভাবী হালিমা বেগমের একটি মোবাইলফোন ও ভাতিজি খাদিজার ৫ আনা ওজনের স্বর্ণের কানের দুল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় আজমল হোসেনের চিৎকারে পাশের ঘরের চাচা আব্দুল জলিল (৬৫) উঠানে ডাকাতদের ধরতে এগিয়ে গেলে ডাকাতদের তিনি চিনে ফেলেন। তখন ডাকাত দল ছুরা ও রামদা দিয়ে আব্দুল জলিলকে পেটে, হাতে ও বুকে উপর্যুপরি গুরুতর আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান যান। এ সময় আব্দুল জলিলের স্ত্রী মেওয়া বেগম স্বামীকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে তার কানের ৮ আনা ওজনের একজোড়া দুল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। লুণ্ঠিত মালামালের মূল্য ৫৭ হাজার টাকা ছিলো। এ ঘটনায় আজমল হোসেন বাদি হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েক জনের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১৪ (২৭-৬-২০১৪)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১২ মার্চ বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল বশার মো¤ম্মদ বদরুজ্জামান ৪ জনকে অভিযুক্ত করে ৩৯ নং একটি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করেন এবং ২০১৬ সালের ১৫ জুন সিলেটের পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ এমরান হোসেন ৬ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে ৭৬ নং একটি ‘সংপূরক’ চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। এরপর ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে বিচারকার্য্য শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানী ও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী নিজাম উদ্দিন, মো: রিয়াজ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, রেদওয়ান আহমেদ ও জাকির হোসেনকে দ্যা পেনাল কোর্ট ১৮৬০ সালের ৩৯৬/৩৪ দ:বি: ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে অর্থদন্ডসহ যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট আব্দুস সত্তার ও এডিশনাল পিপি এডভোকেট দিনা ইয়াসমিন ও আসামীপক্ষে এডভোকেট আয়শা বেগম এবং স্টেট ডিফেন্স এডভোকেট মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান মামলাটি পরিচালনা করেন।