সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহরসহ চার দফা দাবি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

6
সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সদস্য সচিব মো: আলমগীর হোসেন।

স্টাফ রিপোর্টার :
চার বছরের ডিপ্লোমা-ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সের মেয়াদ ৩ বছরে রূপান্তরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি’র বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ডিপ্লোমা-ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান সমস্যা নিরসনসহ ৪ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ সিলেট জেলা শাখা। সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব মো. আলমগীর হোসেন।
শোকাবহ আগষ্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০০ সালে তিন চারটি জাতীয় পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ ও গবেষণা প্রতিবেদনের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আন্তর্জাতিকমানের ৪ বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করেছিলেন। সম্প্রতি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি সেই কোর্সের মেয়াদ ৩ বছর করার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এ সময় তিনি অভিভাবকদের অর্থ সাশ্রয়ের খোড়া যুক্তি তুলে ধরেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত একটি মিমাংসিত কোর্স সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্য ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাব্যবস্থা ও জাতীয় প্রকৌশল কর্মপরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’
শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্য শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষক ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেনি পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চরমভাবে অপমান করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বহুমুখী উন্নয়ন ও বিকাশের সাথে সাথে শিল্প কারখানায় উন্নত ও জটিল প্রযুক্তির অনুপ্রবেশ ঘটায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কারিকুলাম আধুনিকায়ন করে উচ্চতর প্রযুক্তি বিষয়সমূহ সংযোজন করা হয়েছে। বিভিন্ন টেকনোলজিতে আধুনিক ডিপ্লোমা-ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক কর্মবাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব ও আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে শিক্ষার মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে এ শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার ২০৩০সালে ৩০% এবং ২০৪০ সালে ৫০% এ উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে শিক্ষামন্ত্রীর এ ধরনের দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্য পুরো ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। আমরা আশংকা করছি-শিক্ষামন্ত্রীর এ ধরনের দায়িত্বহীন বক্তব্যের ফলে এই শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
এমন বক্তব্যে শিক্ষার্থী ভর্তির হার আরো নিম্নমুখী হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্স ৩ বছর করা হলে, এ শিক্ষার প্রতি মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কর্মক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ অবমূল্যায়িত হবেন। ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স উত্তীর্ণ প্রকৌশলীগণ মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবমূল্যায়িত হওয়ার শংকা সৃষ্টি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ হ্রাস পাবে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের যোগ্যতা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের সাথে এডুকেশনে পার্থক্য ২ বছর হওয়ায় চাকরির একধাপ নিচে বেতন ও মর্যাদা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে আগের মতো বেতন ও মর্যাদা থাকবে না, তাতে দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প কারখানায় নিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে এবং উদ্যোক্তাদের মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশী জনবল নিয়োগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভয়াবহ শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণসহ বিভিন্ন ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু গত ৩ বছরেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষক স্বল্পতা, ল্যাব/ওয়ার্কসপ, ক্লাসরুম সংকট নিরসনসহ কোন সমস্যাই সমাধান করতে পারেনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে একটি করে কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে এসেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহে তীব্র শিক্ষক সংকট, ল্যাব, শ্রেণিকক্ষ ও ওয়ার্কসপ প্রকট স্বল্পতার কারণে মানসম্পন্ন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই শিক্ষক সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃজন করা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক নিয়োগের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বরং, রাতের আঁধারে ইনস্ট্রাক্টর পদে নন টেকনিক্যাল ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে এই শিক্ষাকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স প্রতি সেমিস্টারে ১৬ সপ্তাহ হিসেবে ৯৬ কার্যদিবস ক্লাস গ্রহণের বিধান থাকলেও কোভিড-১৯ এর কারণে পিছিয়ে থাকা সেমিস্টার সমন্বয়ের নামে অসৎ উদ্দেশ্যে সেমিস্টার ১২ সপ্তাহে শেষ করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীর ‘আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত’ থেকে সরে আসাসহ চার দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক প্রশান্ত কুমার চৌধুরী, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মোঃ নজরুল হোসেন, সহসভাপতি মো. আবদুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন আহমেদ, অর্থ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক উজ্জ্বল কুমার দে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি (ডিপ্রকৌস) সিলেট শাখার সভাপতি মো সাইদুর রহমান।