মুরারিচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সালেহ আহমদের অবসর গ্রহণ

35

লবীব আহমদ এমসি কলেজ থেকে :
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মুরারিচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সালেহ আহমদ কলেজটির ৪৭তম অধ্যক্ষ হিসেবে সফলতা, সততা ও নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালন করে বুধবার (২৪ আগষ্ট) কর্মজীবনের অবসর গ্রহণ করেন। ২৪শে আগস্ট প্রতিষ্ঠানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর পান্না রানী রায়ের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
এর আগে প্রফেসর মো. সালেহ আহমদ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মুরারিচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
তিনি ১৯৮৯ সালে ইন্সটিটিউট অব পার্সোনাল ম্যানেজমেন্টের প্রভাষক হিসেবে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে চতুর্দশ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগদান করেন সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে। মুরারিচাঁদ কলেজসহ বাংলাদেশের নামকরা অনেক কলেজে তিনি কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি মুরারিচাঁদ কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মজীবনে যেমন একজন দক্ষ প্রশাসক, শ্রেণিকক্ষে তেমনি বিজ্ঞ শিক্ষক, সামাজিক জীবনে একজন শ্রেষ্ঠ সংগঠক। তিনি কেবল একজন শিক্ষক নন, সচেতন অভিভাবক। হাজারো মানুষ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করেন। তিনি একজন দূরদর্শী পরামর্শক। একজন শিক্ষক বলছেন, এই কর্মজীবনে কত ঝড় এসেছে আমাদের উপর। কিন্তু আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। আমরা আজ ছায়াবৃক্ষ স্বরূপ অভিভাবককে হারাচ্ছি। তবে বিশ্বাস করি অবসরেও তাঁর সহযোগিতা পাবো।
মুরারিচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর তিনি ঐতিহ্যবাহী এই মুরারিচাঁদ কলেজের অনেক উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজ করেছেন। শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরাল নির্মাণ, খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদ (কাপ্তান মিয়ার) ম্যুরাল, পুরো কলেজকে সিসিটিভির আওতাভুক্ত, কলেজের চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ১০ তলা বিল্ডিংয়ের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেওয়া, ক্যাম্পাস সবুজায়ন করার জন্য প্রায় ৭৫ হাজার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী, আইডিজির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য ১১টি ডিজিটাল ক্লাসরুম, কলেজের লাইব্রেরি ও বিভাগগুলোকে ব্যাপক সংস্কার, মহিলা কমনরুম ও ডে কেয়ার সেন্টার, যুব রেড ক্রিসেন্টের ইউনিট গঠনসহ আরও অনেক কিছু।
এছাড়াও তিনি অনেক সামজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মুরারিচাঁদ কলেজের বিএনসিসির প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে (১৯৯৬-২০০৬) দায়িত্ব পালন করেছেন। ঐতিহ্যবাহি মুরারিচাঁদ কলেজের অন্যতম নাট্যসংগঠন থিয়েটার মুরারিচাঁদের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই সকল কর্ম যজ্ঞের জন্য তিনি অনেক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ বক্তা, রোটারি ইয়ুথ লিডারশীপে অ্যাওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ ক্যাম্পার, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ পদকে ভূষিত হন।
তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে গত বুধবার অবসরে যান।
প্রফেসর মো. সালেহ আহমদ ১৯৬৩ সালে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহি সৈয়দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম মাওলানা আব্দুর রউফ এবং মাতা সৈয়দ শাফিয়া খাতুন। তিনি ১৯৭৮ সালে সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১ম বিভাগে ৩ বিষয়ে লেটার মার্কস ও স্কলারশিপ প্রাপ্ত হয়ে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করেন। তারপর মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। তিনি মুরারিচাঁদ কলেজে পড়ালেখা করে মুরারিচাঁদ কলেজের শিক্ষক ও অধ্যক্ষ হয়েছেন।