শুভ জন্মাষ্টমী কাল

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আগামীকাল শুক্রবার জন্মতিথি, শুভ জন্মাষ্টমী। দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপূণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হলেও আগামীকাল শুক্রবার জন্মাষ্টমী তিথিতে সকালে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ এবং বিকেল তিনটায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গন থেকে ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমীর মিছিল বের করা হবে। রাতে অনুষ্ঠিত হবে শ্রীকৃষ্ণপূজা। তবে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবন থেকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ থেকে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করেছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও পুরোহিতরা বলেছেন, বিশুদ্ধ পঞ্জিকা ও তিথি অনুসারে জন্মাষ্টমী শুক্রবার উদযাপিত হবে। ঢাকাসহ সারাদেশে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রাসহ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাও শুক্রবার আয়োজিত হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুক্রবার ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমীর মিছিল বের হবে। সকালে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ শেষে শুক্রবার বিকেল তিনটায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমীর এই মিছিল বের করা হবে। রাতে অনুষ্ঠিত হবে কৃষ্ণপূজা। এছাড়া জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে যুক্ত হয়ে আমাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
সনাতন ধর্মানুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয়গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতার উদগাতা শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগের বিশৃঙ্খল ও অবক্ষয়িত মূল্যবোধের সময়ে পৃথিবীতে মানবপ্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই সেই বাণীর মূল বিষয়। তাই তিনি ভক্ত ও বিশ্বাসীদের কাছে প্রেমাবতার।
ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০-১০০০ সালে সনাতম ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের অবির্ভাব ঘটে। তার জন্মের সময় এই বিশ্বব্রহ্মা- পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই মানব জাতিকে রক্ষার জন্য ভগবানে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন। শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করছে হাজার হাজার বছর ধরে। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা হলো- সংঘর্ষ ও অন্যায়কে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই পবিত্র দিনে সকল অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করার শপথ নিতে হবে।
দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতায় কাল শুক্রবার উদযাপন করা হবে মহাবতার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাদের সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করেন।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি তিন দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে গণভবন থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া কাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ঐতিহাসিক ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গন থেকে বের করা হবে বর্ণাঢ্য-মনোলভা ঐতিহাসিক পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী মিছিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। রাতে কৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া আগামী শনিবার বিকেলে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এলজিআরডিমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি। উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা : শুক্রবার জন্মাষ্টমীর ঐতিহাসিক মিছিল উপলক্ষে যানজট পরিহারের লক্ষ্যে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে শুরু করে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত এসব এলাকায় যানবাহন চলাচলের রুট পরিবর্তনের অনুরোধ করেছে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বুধবার ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলামের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
এছাড়া শোভাযাত্রার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভযাত্রায় শুরু থেকে মিলিত হতে হবে, কোনক্রমেই শোভাযাত্রার মাঝপথ দিয়ে কোন ব্যক্তি শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলিব্যাগ, বড় কোন ব্যাপক, পোটলা, দাহ্যপদার্থ, ছুরি, অস্ত্র, কাঁচি, ক্ষতিকারক তরল, ব্লেড, দিয়াশলাই, গ্যাসলাইট ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া যাবে না। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির-পলাশী বাজার-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্ব¡র-হাইকোর্ট-বঙ্গবাজার-ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবন- গোলাপ শাহ মাজার-গুলিস্তান মোড়-নবাবপুর রোড- রায় সাহেববাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরবাসীকে এসব রুট পরিহারের অনুরোধ করেছে ডিএমপি।