আন্ত:নগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তনের দাবি যাত্রীদের ॥ মাঝরাতে স্টেশনের বাইরে গেলেই বিপদে পড়তে হয়

34

কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা :
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেট গামী আন্ত:নগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন এ রোডে যাতায়াত কারী অধিকাংশ যাত্রীরা। ঢাকা কমলাপুর থেকে ট্রেনে ভ্রমন করে মাঝ রাতে স্টেশনে নেমে নিশ্চিত বিপদের মূখে পড়তে হয় অনেক যাত্রীদের। বিশেষ করে মহিলা-যুবতী যাত্রী থাকলে মহা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। সুযোগ বুঝে গাড়ী চালকরা মধ্যরাতে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ তিনগুণ এমনকি এর চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করে নেন। স্টেশনে গভীর রাতে চুরি ছিনতাই কারীর ভয়ে অনেক যাত্রীরা দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পথিমধ্যে সর্বস্ব হারানোর ভয়ে থাকেন সব সময়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সময়সূচী পরিবর্তনের আগে ঢাকা কমলাপুর থেকে সিলেট অভিমুখী আন্ত:নগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি আগে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে আসতো। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক উপবন ট্রেনের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনলে উপবন ট্রেনটি কমলাপুর থেকে রাত সাড়ে ৮টায় ছেড়ে আসে। এতে মহা বিড়ম্বনায় পড়েন শায়েস্তাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, শমসেরনগর, কুলাউড়া, বরমচাল, মাইজগাও ও সিলেট স্টেশনের যাত্রীরা। ট্রেনটি শায়েস্তাগঞ্জ এসে পৌঁছায় রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে, শ্রীমঙ্গল স্টেশনে রাত ১টা ৩০ মিনিটে, শমসেরনগর স্টেশনে ২টা ১৫ মিনিটে, কুলাউড়া স্টেশনে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে, বরমচাল স্টেশনে রাত ৩টায়, মাইজগাও স্টেশনে রাত ৩টা ২০ মিনিটে এবং সিলেট স্টেশনে পৌঁছায় রাত ৪টায়। গভীর রাত থাকায় এসব স্টেশনে যাত্রীরা নেমে তাদের গন্তব্যস্থলে যেতে প্রথমে যানবাহন সমস্যার ভোগান্তিতে পড়েন। যদি ও সিএনজি (অটোরিকশা) পাওয়া যায় তাহলে তাদেরকে ভাড়া বহুগুণ বেশি গুণতে হয় নতুবা আগে থেকেই পরিচিত রিজার্ভ গাড়ী রাখতে হয়। আবার দূর-দূরান্তের যাত্রীরা গাড়ী না পেলে স্টেশনেই রাত কাটিয়ে সকালে বাড়ী ফিরতে হয় তাদের। কেউ বা গভীর রাতে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে ছিনতাই কারীরা সেই সব যাত্রীদের গতিবিধি লক্ষ্য করে সময় সুযোগে রাস্তা থেকে সব কিছু হাতিয়ে নিয়ে যায়।
বড়লেখা উপজেলা আজিমগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনিরুল, তারেক, সাইফুল ও মারজান জানান, বাসের ভ্রমণ কষ্ট দায়ক তাই তারা ঢাকা থেকে নিয়মিত উপবন ট্রেনে কুলাউড়া জংশন স্টেশন পর্যন্ত আসেন। আগে থেকে সিএনজি অটোরিক্সা রিজার্ভ করে রাখতে হয়। তার জন্য ৩শ’ টাকার স্থলে গুণতে হয় আটশ থেকে এক হাজার টাকা, রিজার্ভ না থাকলে তাৎক্ষণিক গাড়ী ভাড়া নিলে এর চেয়ে দ্বিগুণ দাবী করেন চালকরা। কুলাউড়া স্টেশনে রাত আড়াইটা কিংবা পৌনে ৩টায় নেমে ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরে যাওয়াটাও ঝুঁকিপূর্ণ। ছিনতাইকারী আর ডাকাতের ভয়ে তটস্থ থাকতে হয়। জুড়ী উপজেলার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ, হারিছ মোহাম্মাদ, সুমন আহমদ ও রফিক মিয়া জানান, দিনের বেলা একটা সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে যেতে লাগে দেড়শ টাকা। মাঝরাতে ট্রেন থেকে নামলে গুণতে হয় ৩ থেকে ৫শত টাকা।
কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ব্যবসায়ী কামাল মিয়া ও জুবের আহমদ, বরমচাল ইউনিয়নের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাজু মিয়া, ঢাকায় চাকরীরত কর্মধা ইউনিয়নের বাসিন্দা সেলিম আহমদ জানান, ঢাকা থেকে কুলাউড়া স্টেশনে ফিরে গভীর রাত হওয়ায় বাড়িতে যাওয়ার কোন গাড়ী পাওয়া যায় না। সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবেক সেনা কর্মকর্তা আরজান আলী জানান, ঢাকায় কাজ সেরে শমসের নগর স্টেশনে ফিরে সকাল হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয়। পাহাড়ী অঞ্চল দিয়ে বাড়ি ফেরার ঝুঁকি বেশি। ফলে রেলস্টেশনে ভোর হওয়া পর্যন্ত সময় কাটাতে হয়। স্টেশন এলাকায় মাদক চোরাকারবারী, মাদক সেবক আর ছিনতাইকারীদের উৎপাতে আতঙ্কে সময় কাটে। শহরের মাগুরা এলাকার বাসিন্দা শিমুল ও লস্করপুর এলাকার বাসিন্দা শিপন জানান, স্টেশন নেমে বাসা পর্যন্ত পৌঁছা দুষ্কর হয়ে পড়ে। একদেড় কিলোমিটারের রাস্তা অতিক্রম করে বাসায় যেতে সিএনজি অটোরিক্সা একশ দেড়শ টাকা দাবি করে। ছিনতাইকারীর ভয়ে হেটে যাওয়ার কোন উপায় নেই। এসকল স্টেশনের যাত্রীরা স্টেশনে নেমে পড়তে হয় নানা বিপাকে।
অধিকাংশ ট্রেন যাত্রীদের দাবি ট্রেনটি পূর্বের সময়সূচিতে ফিরে গেলে যাত্রীরা বিশেষ করে সিলেট কুলাউড়াসহ মাইজগাঁও এবং শমসেরনগর এসব স্টেশনের যাত্রীরা ফযরের নামাযের পর অর্থাৎ ভোরের আলোয় আলোকিত হওয়ার পর তাদের স্টেশনে নামবে। তাতে ভাড়ার ক্ষেত্রে ২-৩ গুণ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে না। আবার ছিনতাইকারী কিংবা ডাকাতের ভয়ও থাকবে না।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া স্টেশনের কর্তব্যরত মাস্টার মুহিবুর রহমান জানান, যারা ট্রেনের সময়সূচি নির্ধারণ করেন তাদের বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত ছিলো। ট্রেনের এই সিডিউলের কারণে যাত্রীও তুলনামুলক কম হয়। উপবন ট্রেনের আগের সময়সূচি টাই ভালো ছিলো।