খোলাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দাম, ভোগান্তি সাধারণ ক্রেতার

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজধানীর বেশিরভাগ মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে ডলার সংকট রয়েছে। বর্তমানে এসব এক্সচেঞ্জে বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। এমনকি ক্রেতার তুলনায় ডলারের সরবরাহ খুবই কম- এমনটাই দাবি ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে এতদিন যারা রাস্তায় খুচরা ডলার কেনাবেচা করতেন তারাও গোপনে ব্যবসা করছেন। ক্রেতা দেখলেই ইশারা-ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইছেন ডলার লাগবে কি না। এরপর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেই তাদের কাছ থেকে কেনা যাচ্ছে ডলার। তবে তার জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।
এরপরও চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ডলারের সংস্থান হচ্ছে না। ফলে সাধারণ ক্রেতাকে বাড়তি দাম দিয়েই কিনেত হচ্ছে ডলার। খুচরা ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে প্রতি ডলারের জন্য ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে, যা টাকার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ডলারের সর্বোচ্চ দাম। তবে কোনো বিক্রেতা পেলে তার কাছ থেকে ১১২ থেকে ১১৪ টাকায় ডলার কিনে নিচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অভিযান শুরুর পর থেকেই পরিস্থিতি কঠিন হয়েছে। এখন পর্যাপ্ত ডলার নেই, ক্রেতা এলেও চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বুধবার (১০ আগষ্ট) মতিঝিল এলাকায় খোলাবাজারের ডলার ব্যবসায়ী ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অধিকাংশ মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ জানায়, তাদের অনেকের কাছেই এখন নগদ ডলার নেই। কারও কাছে কোনো ক্রেতা এলে যেসব হাউজে নগদ ডলার আছে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ক্রেতাকে সরবরাহ করা হয়।
তবে খুচরায় ডলার পাওয়া যাচ্ছে সহজেই। আগের মতো রাস্তায় বসে ডলার বিক্রি না করলেও তারা রাস্তায় অবস্থান করছেন। কোনো ক্রেতা পেলেই তার ডলার লাগবে কি না জানতে চাওয়া হচ্ছে। পরে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা দাম বলা হচ্ছে। এ দামে রাজি হলেই ক্রেতার হাতে চলে আসছে ডলার।
এদিকে বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউজে কথা বলে জানা যায়, সেখানে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। তবে অধিকাংশ হাউজেই ডলার সংকট রয়েছে। ক্রেতা সেজে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ব্যবসায়ী জব্বারের। তিনি বলেন, এখন নানা সংকটের কারণে আর আগের মতো ব্যবসা নেই। আমরা ১১৪ টাকায় বিক্রি করছি। কিনছি ১১২ টাকায়। এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না।
ডলার সংকট ও ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ব্যবসা করছি। অনেকের কাছ থেকে শুনছি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা, ১১৭ টাকা, ১১৮ টাকা। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে ১১২ টাকার বেশি দরে ডলার বিক্রি করবো না। এটার বাস্তবায়ন রয়েছে সব হাউজে।
হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, তবে এখন ডলার বিক্রি আর আগের মতো নেই, নগদ ডলারের সংকট রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযান শুরুর পর থেকে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। এখন চাইলেও যে কেউ এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার নিতে পারছেন না। এখন অবশ্যই পাসপোর্ট-ভিসা দেখাতে হবে। তবে খুচরায় বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে কি না জানা নেই।
এদিকে, ডলার কারসাজির সঙ্গে জড়িত ছয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার (৮ আগস্ট) পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, যারা খোলাবাজারে ডলারের অবৈধ ব্যবসা করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪৫টিকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বলা হয়েছে। শোকজের পাশাপাশি আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স না নিয়েই ব্যবসা করে আসছিল।
গত সোমবার (৮ আগষ্ট) ২৫ পয়সা বৃদ্ধি করে আন্তঃব্যাংকে ডলারের নতুন দাম ৯৪ টাকা ৯৫ পয়সা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার ১৩৯ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।