এনজিওগুলোকে কড়া নজরদারী দরকার

13

দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সেবা খাতে নানা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) কাজ করে থাকে। দরিদ্র শ্রেণির একটি বড় অংশের মানুষ নানাভাবে এনজিওর কর্মকাণ্ডে উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু এই চিত্র সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক নয়। প্রায়ই গণমাধ্যমে ঋণ নিয়ে ফেরত দিতে না পারায় নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর আসে।
ঋণের কিস্তি আদায় করতে গিয়ে গ্রহীতার ওপর নিপীড়নের ঘটনা কম ঘটছে না।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো ঋণের কিস্তি আদায় করতে গিয়ে কিভাবে অত্যাচার করছে। ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের এক যুবক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ওই টাকা দিয়ে একটি ট্রলার ভাড়া করে ভীমরুলী পেয়ারার ভাসমান হাটে পর্যটক বহন করতেন। কিন্তু আয় সামান্য হওয়ায় ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছিলেন না তিনি। এ নিয়ে গত শনিবার ওই যুবকের সঙ্গে এনজিওর মালিকের কথা-কাটাকাটি হয়। রাতে ওই যুবক বাড়ি ফিরছিলেন। পথে এনজিওটির কয়েকজন লোক তাঁর ট্রলার আটক করেন। এরপর তাঁর হাত, পা ও মুখ বেঁধে দুয়ারিবাড়ির খালে ফেলে দিয়ে চলে যান। স্থানীয়রা পার্থ নামের ওই যুবকের গোঙানির শব্দ পেয়ে এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে। এরপর প্রথমে তাঁকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একসময় দেশে মহাজনি ব্যবস্থা চালু ছিল। জরুরি প্রয়োজনে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যেত। তবে সুদ গুনতে হতো অনেক বেশি। পরিশোধ না করতে পারলে কী হতো তা প্রায় সবার জানা। মহাজনি ব্যবস্থার সে জায়গা দখল করেছে এনজিও। ঋণ আদায় করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই যেসব ঘটনা ঘটানো হয়, সেসবের নির্মমতা যেন মহাজনি প্রথাকেও হার মানায়।
ঋণের কিস্তি না পেলে বাড়িতে গিয়ে গ্রহীতাকে মারধর করা, ধরে নিয়ে থানায় দেওয়া, মামলা করা, হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল কেড়ে নিয়ে বেচে দেওয়া, বাড়িঘর, সহায়-সম্বল কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনা আধুনিক ব্যবস্থাপনার দাবিদার এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই ঘটানো হয়। এনজিওর চাপে অনেক ঋণগ্রহীতার আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে প্রচুর।
এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য, প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নের জন্য। কিস্তি আদায় করতে গিয়ে নির্যাতন করা হলে সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তখন মহাজনদের থেকে তাদের আলাদা করার উপায় থাকে না।
এসব সংস্থাকে সতর্ক ও যৌক্তিক আচরণ করতে হবে। সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও কড়া নজর রাখতে হবে।