ইভিএম এর সুবিধা-অসুবিধা পর্যালোচনা করে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেবে ইসি

14

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ব্যালট পেপারে ভোটের তুলনামূলক পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সুবিধা-অসুবিধা পর্যালোচনা করে এই ভোট যন্ত্রটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিশন থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে, সেসব নির্বাচনে সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি, ব্যয়, সহিংসতা, কারচুপি, ভোট ব্যবস্থাপনা, ফলাফল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি তথ্যই মূলত চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্য নিয়ে তুলনা করা হবে ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সঙ্গে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএমের ব্যবহার চায়। অন্যদিকে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১৬টির মতো দল ইভিএমের ব্যবহার একেবারেই চায় না।
এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি চাপের মধ্যে পড়েছে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএম নিয়ে একটি সংকট রয়েছে। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তার কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে তাদের হাতে ১ লাখ ৫৪ হাজারের মতো ইভিএম রয়েছে। ৩০০ আসনে ভোট করতে হলে আরও তিন লাখের মতো ইভিএম কিনতে হবে। ইভিএম প্রকল্পটি প্রায় শেষের পথে। এক্ষেত্রে নতুন করে আরেকটি প্রকল্প ইভিএমের জন্য নিতে হবে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ইভিএম কেনার জন্য।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ইভিএম নিয়ে কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে বলেছেন সংলাপে। কী সুবিধা ও অসুবিধা ইভিএম এবং ব্যালটে আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। দু’টোরই কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে।
২০১৮ সালের পর ইভিএম যে সংসদীয় আসন ও স্থানীয় সরকারের ভোট হয়েছে, এই তথ্যগুলো ইসি সচিবালয়কে তালিকাসহ দিতে বলেছি। প্রত্যেকটাতে কত ভোট পড়েছে? আইন শৃঙ্খলার কী সমস্যা হয়েছে, সেগুলো চেয়েছি। ঠিক একইভাবে ব্যালটে যেখানে ভোট হয়েছে সে তথ্যও দিতে বলেছি। এগুলো দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো কোনটাতে ভোট নেবো। এভাবে নাম্বারিং করবো। নম্বার যে পক্ষে বেশি থাকবে, সেই সিদ্ধান্তই নেবো আমরা।
তিনি বলেন, গত কমিশন কিন্তু মাত্র ছয়টা আসনে ইভিএমে ভোট করেছিল। তো সরকার দেড় লাখ করতে বলেছিল। তারা তো করেনি। তো অভিযোগটা কিন্তু ঠিক না। সরকার থেকেও কিছু বলেনি- ইয়েস নো ভেরি গুড। তারা তাদের দল থেকে বলেছে। যেহেতু ইভিএমে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই, ভোটের পরে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই, একজনের ভোট আরেকজনের দেওয়ার সুযোগ নেই, তাই তারা ৩০০ আসনের ভোট করারও প্রস্তাব করেছেন।
কত আসনে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে জানতে চাইলে সাবেক এই সচিব বলেন, ইভিএম কতগুলো ভালো আছে এখনো আমরা জানি না। একজন কমিশনার দায়িত্বে আছেন, তিনি এগুলো দেখছেন। নির্বাচনে দু’টো বুথের জন্য ইভিএম লাগে তিনটা। ইভিএম কতগুলো কার্যক্ষম আছে, তা দেখা হচ্ছে।
এছাড়া নতুন করে আরও মেশিন কিনতে হলে কেবল টাকাই নয়, সংরক্ষণ, আনা ও নেওয়া ইত্যাদি বিষয় আছে। এজন্য টাকা, সময় ও মানুষ; এই তিনটা জিনিস প্রয়োজন। কাজেই ইভিএম নিয়ে পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত নিতে আরও দুই মাস সময় বা এর চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে।
২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল।
কয়েক বছর ভালো ফল পাওয়া গেলেও ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমনকি ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করতে পারেনি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একইসঙ্গে নতুন এবং উন্নতমানে ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সিদ্ধান্তের আলোকে কে এম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে অধিকতর উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেয়। নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় নির্বাচন কমিশন। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ছয়টি আসনে) ও অন্যান্য উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই মেশিন ব্যবহার করা করে বিগত কমিশন।