ওসমানীতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলন স্থগিত

22

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহানি ও ২ শিক্ষার্থীর উপর হামলার অভিযোগের ঘটনায় গড়ে ওঠা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে বাকি আসামিরা গ্রেফতার না হলে পুনরায় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিজেদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এদিকে গত বুধবার রাত ১২ টার দিকে শাহপরান থানা এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা মামলার প্রধান আসামি দিব্য সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত দিব্য নগরীর কাজলশাহ এলাকার ৫২নং বাসার রমনীকান্ত সরকারের পুত্র। ২টি মামলার প্রধান আসামি দিব্য সরকার। এর আগে ১ আগষ্ট সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মামলার আরও ২ আসামি সাঈদ হাসান রাব্বি ও এহসান আহমদকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে ওসমানী মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ মুন্তাকিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনায় প্রধান আসামি দিব্য সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সম্মানিত ভিসি, সম্মানিত পরিচালক স্যারসহ আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের অনুরোধে আমরা কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করছি। আমরা ৭ দিন সময় বেঁধে দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে যদি বাকি আসামিরা ধরা না পড়ে, তাহলে আমরা আবারও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে যে নিরাপত্তা ক্রটি, সেই ক্রটি যদি দূর করা না হয়, বিশেষ করে আমাদের নারী ইন্টার্নিদের নিরাপত্তায় যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। কারণ, নিজেদের নিরাপত্তা না থাকা অবস্থায় অন্যদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এই আন্দোলন স্থগিত হওয়ায় এখন হাসপাতালে স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে। হাসপাতালে থাকা রোগীদের দুর্ভোগের শেষ হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে। গত কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলনে সাধারণ রোগীরা হয়ে পড়েছিলেন জিম্মি। আন্দোলনকারীরা জরুরি বিভাগ, আইসিইউ ও হৃদরোগ বিভাগ ছাড়া অন্য কোনো রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেননি। তাদের আন্দোলনে সাধারণ রোগীদের ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণার আগে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর শাহপরান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় দুই মামলার প্রধান আসামি দিব্য সরকারকে।
মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন, দিব্য সরকারের রিমান্ড চাওয়া হবে না। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।
জানা গেছে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে গত রবিবার দুপুরে এক রোগীর ২ স্বজনের বাকবিতন্ডা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ সময় ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়। ওই ঘটনার জের ধরে পরদিনে সোমবার রাত ৮টার দিকে ইমন আহমদ ও রুদ্র নাথ নামে ২ শিক্ষার্থীর ওপর কলেজের পেছনে হামলা হয়। আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন সহপাঠীরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাত ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন। এছাড়া কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এবং সিলেট আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। পরে রাত ১টার দিকে আন্দোলনরতের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ ৫ দাবি জানিয়ে উত্তাল হয়ে উঠে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েন সাধারণ রোগীরা। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে রাত ৩টার দিকে ধর্মঘট ও অবরোধ স্থগিত করেন আন্দোলনরতা। তবে এসময় তারা হামলাকারীদের গ্রেফতার মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বেলা দুইটায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ফের বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ইন্টার্ন চিকিৎসকের দাবিগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে হামলাকারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় বৈঠক শেষে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে বিকেলে তারা কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তবে শুধু ইমার্জেন্সি ও হৃদরোগ বিভাগে সেবা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে ৮ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার দুপুরে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ২ মামলার আসামিরা হলেন- দিব্য সরকার, আব্দুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি।