ওসমানীতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনা ॥ জরুরি ও বহির্বিভাগের সেবা আজ থেকে বন্ধের হুমকি

15
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ এর ইন্টার্ন ডাক্তারদের সড়ক অবরোধ। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে বহির্বিভাগসহ ওসমানী হাসপাতালের সমস্থ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার শেষে এ ঘোষণা দেন তারা।
এর আগে দুপুর ১টার দিকে ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা মেডিকেল রোড অবরোধ করেন। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলা ও হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহানীর চেষ্টার প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার রাত থেকে সিওমেক-এ চলছে আন্দোলন। মঙ্গলবার পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক হলেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি। মূল অভিযুক্ত কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় তারা ওসমানী হাসপাতালের শুধু জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগ ছাড়া সকল বিভাগে কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে তারা বিক্ষোভ করে দুপুর ১টার দিকে মেডিকেল রোড অবরোধ করেন। এসময় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় হাসপাতালের মূল ফটকও বন্ধ করে দেন। তবে এক ঘণ্টা পর আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে মূল ফটক খুলে দেন। এসময় কর্মবিরতি ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
জানা যায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী (ইন্টার্ন চিকিৎসক) ইমন আহমদের (২৪) সঙ্গে গত রবিবার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের বাগবিতণ্ডা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসময় ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়। ওই ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৮টার দিকে ইমন আহমদ ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথের (২২) উপর কলেজের পেছনে হামলা হয়। আহত অবস্থায় তাদেরক উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন সহপাঠীরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাত ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন। এছাড়া কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আন্দোলন করলেও সার্বিক চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক রয়েছে। হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘একদম সর্বোচ্চ লেভেল থেকে তাদের সাথে কথা হচ্ছে এবং এটার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইজিপি থেকে এবং আমাদের অনেক উপরের লেভেল থেকে এটার ব্যাপারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। একটাই দাবি আপনারা জানেন যে, অন্তত একজন বা দুইজন হলেও যেন আসামি ধরা পড়ে। ওরা (শিক্ষার্থীরা) পুলিশের রেসপন্স দেখতে চাচ্ছে, অ্যাকশন দেখতে চাচ্ছে। এখানকার পুলিশ কমিশনারের সাথে রাতে ও সকালে আমার কথা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সবাই (আসামি গ্রেফতারে) কাজ করছে। আশা করি এটার সমাধান হবে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি জানে। তাঁরা উপর থেকে কাজ করছেন। এখানকার ডিজি স্বাস্থ্য এবং ডিজি স্বাস্থ্য-শিক্ষাও খোঁজ রাখছেন।’
হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বড় একটা রোল প্লে করে। এটা সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি (সমাধান) হবে। অবশ্যই (স্বাভাবিক কাজে) কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমাদের আশা আসামিরা তাড়াতাড়ি গ্রেফতার হবে এবং আমরা স্বাভাবিক কাজে ফিরে যাবো।’ বর্তমানে অন্যান্য ডাক্তার ও স্টাফ যারা আছেন, তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। সার্বিক নিরাপত্তাবৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাম্পের জন্য একটা জায়গা দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। পুলিশের টহল বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আনসার বাহিনীর সদস্যদেরও বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে আশা করি নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।