সুনামগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে আসামীদের হাতে বাদী খুন

8

আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে প্রকাশ্য দিবালোকে মামলার আসামীরা ছুরিকাঘাত করে বাদীকে হত্যা করেছে। নিহত বাদীর নাম মিজানুর রহমান খোকন (৪৫)। তিনি জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের গলাখাল গ্রামের ফটিক মিয়ার ছেলে ও আদালতে বিচারাধীন সিআর ৭২/২০২২ নং মামলার বাদী। আসামীদের বিরুদ্ধে নিহতের চাচাতো ভাই মাসুক মিয়ার দায়েরকৃত ননজিআর ১৬৬/২০২২ নং মামলাও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ১২ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আসামীদের বাড়ীর দক্ষিণে সরকারী রাস্তার উপর গলাখাল গ্রামের মাসুক মিয়ার ছেলে নাছিম মিয়া (১৬) ও তানভীর মিয়া (১৮) কে আসামীরা প্রাণনাশের হুমকি দিলে গলাখাল গ্রামের মৃত মখলিছ মিয়ার পুত্র মাসুক মিয়া বাদী হয়ে উক্ত হুমকির ঘটনায় জগন্নাথপুর থানায় জিডি নং ৬৯১ তাং ১৫/৫/২২ইং দায়ের করেন। পরে ৭/৬/২২ইং তারিখে জগন্নাথপুর থানার এসআই মোঃ আব্দুস ছাত্তার, গলাখাল গ্রামের মৃত লাল মিয়ার পুত্র ফয়েজ মিয়া (৩২), আফরোস মিয়ার পুত্র সেবুল ( ২৮), আফরোশ মিয়ার পুত্র সাজিদ মিয়া (৩৪) ও বাদশা মিয়ার পুত্র শাহান মিয়া (২৪) এর বিরুদ্ধে আদালতে ৫২/২০২২ইং নন এফআইআর প্রসিকিউশন প্রেরণ করেন। ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে আসামীরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে যথারীতি জামিন লাভ করেন। অন্যদিকে বাদী মিজানুর রহমান খোকন ও মাসুক মিয়াও তাদের সাক্ষীদের নিয়ে পৃথক দুটি মামলায় আদালতে হাজিরা দেন। আদালতের কাজ শেষ করে বাদী ও বিবাদীপক্ষ জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হয়। এ সময় উত্তেজিত আসামীরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে বাদী মিজানুর রহমান খোকন মিয়া (৪৫) কে বুকে ও পেটে জখম করে গুরুতর আহত করলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। পরে জেলা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিকে আদালত প্রাঙ্গণে প্রকাশ্য দিবালোকে মামলার আসামীগণ কর্তৃক বাদীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করার ঘটনায় আইনজীবীরা আসামীদেরকে হাতেনাতে আটক করে কোর্ট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় কনস্টেবল মিজান আইনজীবীগণ কর্তৃক আটক করে দেয়া আসামী শাহান মিয়া (২৪)কে ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীগণের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিলে সদর থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কনস্টেকল মিজান ও অন্যান্য ৩ আসামীকে আটক করেন।
প্রত্যেক্ষদর্শী মোঃ হাবিবুর রহমান এডভোকেট ও জুনেদ আহমদ এডভোকেট জানান, মামলার আসামীরা ছুরিকাঘাত করে বাদীকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার সময় আমরা প্রথমে শাহান মিয়া নামের একজনকে আটক করে পুলিশ কনস্টেকল মিজানের হাতে সোপর্দ করি। কনস্টেকল মিজান আমাদের সোপর্দকৃত খুনী শাহান মিয়াকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করলে ঘটনাস্থলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীরা বাকী ৩ আসামী যথাক্রমে ফয়েজ মিয়া (৩২), সেবুল ( ২৮) ও সাজিদ মিয়া (৩৪) কে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে খুনের সঙ্গে জড়িত ৩ ব্যক্তি ও কনস্টেকল মিজানকে আটক করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে ছুরিটি উদ্ধার করে পুলিশের হাতে আসামীসহ হস্তান্তর করি। নিহত বাদী মিজানুর রহমান খোকনের আইনজীবী মোঃ বাহার মিয়া বলেন, আসামীরা আমার মোয়াক্কেল এর দায়েরকৃত সিআর ৭২/২০২২ ও তার চাচাতো ভাই মাসুক মিয়ার দায়েরকৃত ননজিআর ১৬৬/২০২২ নং মামলার আসামী। বাদী মিজানুর রহমান খোকন ও তার চাচাতো ভাই মাসুক মিয়া উভয়েই নিজেদের মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। অন্যদিকে আসামীরাও আদালতে আসে। জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে আসামীরা বাদীকে খুন করেছে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সাঈদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশের কোন সহযোগিতা বা গাফিলতি থাকলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা। পলাতক আসামী শাহান মিয়াকেও গ্রেফতার করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী ও এসআই হাবিব বলেন, আমরা আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তারা।