ত্রাণ তহবিলে আর্থিক অনুদান গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ॥ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করে

9
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁর কার্যালয় প্রান্তে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে আর্থিক অনুদান প্রদানকারী সরকারী/বেসরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারের প্রচেষ্টাই হচ্ছে দেশের জনগণের দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা; যাতে বিশ^ দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারি। সরকার সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছে। কেননা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ায়। সোমবার সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুদান গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রেল যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত করছি, নতুন রেলপথ স্থাপন করছি এবং সেতু নির্মাণের পাশাপাশি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীগুলো উন্মুক্ত করছি। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করে এবং বাণিজ্য ও ব্যবসা বাড়িয়ে তোলে।
তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশেই তার সরকার পুল, ব্রিজ এবং উন্নত সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলে যোগাযোগের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি নদীগুলো ড্রেজিং করে নৌপথটাও আমরা সচল করেছি। রেল, যেটা এক সময় বন্ধ করে দিয়েছিল আমাদের পূববর্তী সরকার (বিএনপি-জামায়াত জোট) সেটা আবার নতুন করে চালুর পাশাপাশি নতুন নতুন রেললাইনও করে দিচ্ছি। ফলে যোগাযোগটাও বাড়ছে। অর্থাৎ যোগাযোগটা আমাদের আরও উন্নয়নে এবং শিল্পায়ন করার, ব্যবসা-বাণিজ্য আরও গতিশীল করার জন্য বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের সাফল্যের উল্লেখ করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশেরই এক ব্যক্তির প্ররোচণায় বিশ^ব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেয়, পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীও সরে দাঁড়ায় তখন আমি ঘোষণা দিয়েছিলামÑ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব, তখন দেশের জনগণের পাশাপাশি আপনারাও অনেকে আমার পাশে দাঁড়িয়ে সবধরনের সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেজন্য আমি আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
দেশের জনগণই তার ‘সব থেকে বড় শক্তি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সাহস ও সহযোগিতা এবং তারা পাশে থাকাতে আজকে আমরা আমাদের নিজস্ব টাকায় এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আজকে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল অঞ্চল যেটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল সেখানে এখন শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক উন্নতি হবে। সেখানেও আপনাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে এবং এতে করে আমি মনে করি যে, এই অঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যটাই পরিবর্তন হয়ে যাবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবার সরকারে আসার পর তার সরকার যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেছিল যেখানে বিদ্যুত, রেল এবং গ্যাস সংযোগও প্রদান করা হয়। পদ্মা সেতুটাও সেভাবেই করা হয়েছে, মাল্টিপারপাস। সেখানেও গ্যাস, বিদ্যুত, রেল সংযোগের সঙ্গে অত্যাধুনিক ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেট বিভাগে পর পর তিনবার বন্যা হলো, সেখানে যেমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে তেমনি ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তেমনি পানি যখন নেমে আসছে তখন নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিনি এ দেশের যে কোন দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসায় এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন এবং এদেশে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তার সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বলেই আজকে নিজেরাই আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা বা ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যবস্থা করতে পারছি। তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টাই হচ্ছে দেশের জনগণের দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা। যাতে বিশ^ দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারি।
দেশে ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়নও করতে হবে আবার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাটাও নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য যততত্র শিল্প যাতে গড়ে না ওঠে এবং কৃষিজমি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখছি। তার সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি এলএনজি আমদানি করে শিল্প, কলকারখানা চলমান রাখারও উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাকালীন তার সরকার যেমন সকল জনগণের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে তেমনি চলমান বিশ^মন্দার মধ্যে শিল্প, কলকারখানা চলমান রাখতে নানারকম আর্থিক প্রণোদনাও প্রদান করেছে। কোনভাবেই যাতে অর্থনীতির গতিটা ব্যাহত না হয়ে পড়ে সেজন্য কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষসহ সকলকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যেই আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাবটাও অর্থনীতির ওপর পড়েছে। আবার এসেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্যা আসবে এবং সেই সমস্যা মোকাবেলা করেই আমাদের পথ চলতে হবে। আর আজকে আপনারা বন্যাকবলিত মানুষকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। আর আপনারা যখন মানুষের পাশে দাঁড়ান তখন আর আমাদের চিন্তা থাকে না। আমরা মনে করি দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব এবং বিশ^ দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারব। এ ব্যাপারে সকলেই সচেতন থাকবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় পণ্য রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং রফতানির পণ্য সম্ভারে নতুন নতুন পণ্য সংযোজন এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। কেবল রফতানি নয়, দেশের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য তার সরকার অর্থনৈতিক কর্মকা- একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে পরিচালিত করছে। তিনি বলেন, ’৭১ এ মহান বিজয়ের মাধ্যমে সমগ্র বিশে^ বাংলাদেশ যে ভাবমূতি অর্জন করেছিল তা ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর নষ্ট হয় এবং উন্নয়ন, অগ্রযাত্রার গতিটাও থেমে যায়।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই তহবিল থেকে কেবল বন্যাদুর্গত জনগণই নয়, পীড়িত ও দুস্থ জনগণকেও এখান থেকে সাহায্য, সহযোগিতা প্রদান করা হয়। যেখানে তাদের সহযোগিতাটা কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনার প্রাদুর্ভাব পুনরায় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সকলকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার এবং মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
৪৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোট ৩০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বিডিবিএল, ইডকল, বিআইএফএফএল, এক্সিম ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, এবি ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক লিমিটেড, মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।