শুভ জন্মদিন প্রিয় ক্যাম্পাস মুরারিচাঁদ কলেজ

9

লবীব আহমদ :

আজ ২৭ জুন সোমবার। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মুরারিচাঁদ কলেজের ১৩০ তম জন্মদিন। ১৮৯২ সালের আজকের এই দিনে সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশ চন্দ্র রায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৩০ বছরে এই কলেজের রয়েছে অনেক চড়াই-উৎরাই, অনেক ইতিহাস। তার গর্ভ থেকে বের হয়ে আসা সন্তানেরা আজ দেশের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে আছে। কত সহস্র সন্তান যে সে দেশের জন্য উৎসর্গ করেছে তার হিসাব নেই। এ কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছে আমি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুরারিচাঁদ কলেজে রয়েছে প্রায় সবকিছু। আছে নাট্য সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে শুরু করে রিপোর্টার্স ইউনিটি পর্যন্ত। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই কলেজ যেতে মন চায়। কখনো একটানা ২/৩ দিন না গেলে মনে হয় যেন আমি কি হারিয়ে ফেলেছি। এই কলেজটির পূর্বে অবস্থান ছিল সিলেট মহানগরীর বন্দরবাজারের কাছে রাজা জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী স্থানে। ১৮৯১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে এফ.এ অর্থাৎ বর্তমানের উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস খোলার অনুমতি দিলে ১৮৯২ সালের ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এমসি কলেজ যাত্রা করে। কলেজটি ১৯১২ সালে সরকারি কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান ক্লাস ও স্নাতক শ্রেণিতে পাঠদান শুরু হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কলেজের স্থান পরিবর্তন করে শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বর্তমান সিলেটের টিলাগড়ে ১২৪ একর জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। তখন কলেজের শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ৫৬৮ জন। বর্তমানে আছে প্রায় ১৫ হাজারের ওপরে। এখানে ১৫টি বিষয়ে স্নাতক ও ১৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে।
এমসি কলেজের পূর্বে রয়েছে সিলেট সরকারি কলেজ এবং উত্তরে রয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কলেজের সুবিশাল ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি বিশাল খেলার মাঠ। আরও আছে পুকুর, ক্যান্টিন, শহীদ মিনার, ২৬ হাজারের অধিক বই নিয়ে গ্রন্থাগার, স্পোর্টস রুম, অডিটোরিয়াম, মসজিদ, বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্ণার, ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হোস্টেল ও বিভিন্ন বিভাগীয় ভবন।
সিলেট বিভাগের চার জেলার শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার ছেলে-মেয়ে এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। প্রতিবছর ফলাফলের দিকেও এগিয়ে রয়েছে কলেজটি।
এই কলেজের শিক্ষার্থীরা শুধু ক্লাসরুমে পড়ালেখার মধ্যেই থেমে নেই। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও তারা জড়িত। এমসি কলেজে রয়েছে নাটক সংগঠন থিয়েটার মুরারিচাঁদ, মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠন, মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদ, মুরারিচাঁদ ডিবেটিং সোসাইটি, বিজ্ঞান ক্লাব, ফটোগ্রাফি সোসাইটি, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি ও এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি।
বছরজুড়েই তাই নানা অনুষ্ঠান চলে ক্যাম্পাসজুড়ে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রতিবছরই বাংলা নববর্ষ, বসন্ত-বরণ ও বর্ষবরণসহ নানা আয়োজন করে থাকে। এমসি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করছেন। কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী অমিত বিক্রম দেব বর্তমানে কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসায়’। ১৯১৯ সালে সিলেটে এসেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এমসি কলেজের তৎকালীন ছাত্ররা কবিগুরুকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী, প্রখ্যাত গণসংগীতশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, শাহ এএমএস কিবরিয়া, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামসহ অসংখ্য গুণীজন এমসি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
২০১৯ সালে ‘কলেজ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য নির্মাণের মধ্য দিয়ে কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের একটা দাবিও পূরণ হয়েছে।
কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে কলেজের শিক্ষকরা মহামারী করোনাকালীন সময়েও অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে গিয়েছিলেন।
এদিকে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২ এ মুরারিচাঁদ কলেজ বিভিন্ন ইভেন্টে সিলেট বিভাগের সেরা নির্বাচিত হয়। শ্রেষ্ঠ কলেজ প্রধান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো সালেহ আহমদ, শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক (কলেজ) নির্বাচিত হন কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আলাউদ্দিন খান ও শ্রেষ্ঠ শ্রেণি (কলেজ) শিক্ষার্থী আদৃতা তালুকদার নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়াও শ্রেষ্ঠ রোভার গ্রুপ মুরারিচাঁদ কলেজ ও শ্রেষ্ঠ রোভার গোলাম কিবরিয়া নির্বাচিত হয়েছেন।
কলেজের এমন আরও অসংখ্য সাফল্য রয়েছে। এভাবেই এগিয়ে যাক প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় মুরারিচাঁদ কলেজ।