তাহিরপুরে ত্রাণ কম, ত্রাণের জন্য হুড়োহুড়ি

9
তাহিরপুর শ্রীপুর দক্ষিণ রাম সিংহপুর পূর্ব পাড়া বন্যার পর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া তিনটি বাড়ি (নতুন বসতি) টাঙ্গুয়ার হাওর পার।

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
তাহিরপুরে হাওরপারে বন্যাক্রান্ত অধিকাংশ গ্রামে এখনো ত্রাণ পৌঁছায় নি। যেটুকু পৌঁছেছে তা পরিমাণে খুব কম। তাই যে গ্রামে বা যে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন সেখানেই ত্রাণের জন্য হুড়োহুড়ি এমন কি মারামারি শুরু করে দিচ্ছেন বন্যাক্রান্ত লোকজন। যে কারণে অনেক ক্ষেত্রে ত্রাণ দিতে আসা লোকজন ত্রান না দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলা সদর গাজিপুর গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় একটি ত্রাণের নৌকা ঘাটে ভিড়া মাত্র লোকনজন নৌকার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ত্রাণ দিতে আসা লোকজন সেখান থেকে নৌকা ভাসিয়ে দ্রুত অন্য গ্রামে চলে যায়। সে সময় গ্রামের বেশ কয়েক জন প্রবীণ লোকজনদের দেখা যায় কম বয়েসী ছেলে মেয়েদের প্রতি আক্ষেপ ঝাড়তে।
শুক্রবারও দিন ব্যাপী উপজেলার অনেক বন্যাক্রান্ত গ্রাম ঘুরে দক্ষিণশ্রীপুর ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয় বন্যাশ্রয় কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় প্রচুর বন্যাক্রান্ত লোকজন। সেখানেও একই অবস্থা। সিলেট কর অঞ্চল থেকে ত্রাণ দিতে আসা একটি নৌকা ঘাটে ভিড়তে না ভিড়তেই লোকজনে হুমড়ি খেয়ে পরে। সেখানে তারা কোন রকম ত্রাণ দিয়ে দ্রুত অন্যত্র চলে যায়। একই অবস্থা উক্তিয়ারগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে রান্না করা খাবার নিয়ে একটি নৌকা ভিড়লে পাশের গ্রামে থেকে ছোট ছোট নৌকা করে লোকজন এসে বড় নৌকায় উঠে খারের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দেয়।
এ অবস্থা এখন উপজেলা সব কটি বন্যাশ্রয় কেন্দ্র ও অধিকাংশ গ্রামগুলোতে। ত্রাণের পরিমাণ কম হওয়ায় এ অবস্থা চরমে পৌঁছেছে। বন্যার পানি কিছুটা কমলেও অনেকে বন্যাশ্রয় কেন্দ্রতেই রয়েছেন। তাছাড়া অনেকের বাড়ি ঘরে বন্যার পানি উঠার কারণে ও হাওরের ঢেউয়ের থোরে ঘর বাড়ি ভেঙ্গে ধান চাল, ব্যবহারের কাপড় চোপড় এমন কি আসবাব পত্রও পানিতে ভেসে গেছে। বন্যায় অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পরেছেন হাওরপারের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন। তাই ত্রাণের আশায় অনেকেই ছুটছেন হাওরে নৌকা দেখলেই।
শুক্রবার দুমাল গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। শিববাড়ি হাওর পারে একটি বসত ঘরে কোন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই বানের জলে। সে সময় কথা হয় ভেঙ্গে যাওয়া ঘরের মালিক জমরুল মিয়ার সাথে। তিনি জানান, ঘরে যে ধান ছিলো তাও গেছে, সেই সাথে ঘর বাড়িও ভেঙ্গেছে। ৫ সদস্যের পরিবার, এখন তিনি কি করবেন। খাদ্য জোগাড় করবেন না ঘর মেরামত করে কোন রকম ঘরে মাথা গুজার ঠাঁই করবেন এ চিন্তা তিনি দিশেহারা। শুধু দুমাল গ্রামের জমরুল মিয়া নয় এ অবস্থা উপজেলার হাওর পারের সব কটি গ্রামের।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, তাহিরপুরে শতভাগ মানুষ বন্যাকবলিত। কিন্তু সরকারী ভাবে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ এসে পৌঁছায় নি। ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে ত্রাণ দিচ্ছেন কিন্তু তা পরিমাণে একেবারেই কম।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রায়হান কবির বলেন, সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত ত্রাণ আমরা বন্যাক্রান্ত সবকটি গ্রামে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। আরও ত্রাণ আসছে। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অনেকে ত্রাণ দিচ্ছেন। আমি শুনেছি অনেক গ্রামে ত্রাণের নৌকা ভিড়লেই লোকজন ত্রাণের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করছেন। এতে করে ত্রাণ দিতে আসা লোকজন অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন।