বন্যায় সিলেটে ২২ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, বাড়ছে ভোগান্তি

3
গত ৮ দিন থেকে বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে হবিগঞ্জের কয়েকটি উপজেলার কয়েক শতাধিক গ্রাম। ছবিটি হবিগঞ্জের বালিখাল থেকে তোলা। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
৯ দিন ধরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পুরো জেলা তছনছ করে দিয়ে ধীরগতিতে নামছে পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি নামার গতি ছিলো খুবই মন্থর। ফলে জেলার বেশিরভাগ এলাকা এখনও প্লাবিত। ৯ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা বানভাসিদের দুর্ভোগের শেষ নেই। এছাড়া সিলেটে ২২ হাজার ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মানুষের বাড়ছে ভোগান্তি।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ২৪ জুন পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক, জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভায় ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩২০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ হাজার ১৫০টি ঘরবাড়ি। ফসল নষ্ট হয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর। এদিকে, সিলেট নগরী ও আশপাশ এলাকায় গত ৩-৪ দিনে বন্যার পানি অনেকটাই কমেছে। পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে শুরু করলে নগরীর দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু উপজেলা এখনও পানিবন্দি মানুষজন। তবে বর্তমানে নগরীর নেমে যাওয়া পানি রাস্তা-ঘাটে জমে থাকা বন্যার ময়লা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোর যেসব স্থানে পানি জমে ছিল, সেগুলো প্রায় নেমে গেছে। তবে কিছু সড়কে এখনো পানি রয়েছে। এর মধ্যে নগরীর শাহজালাল উপশহর এবং তালতলা সড়ক, কাজিরবাজারসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতেও পানি রয়ে গেছে। তবে সব কটি সড়কেই যানবাহন চলাচল করছে। অপরদিকে, নগরীর যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, কুয়ারপার, লালাদীঘির পার এলাকার পাড়া-মহল্লার পানি ময়লা ও কালো রং ধারণ করেছে। এসব স্থানে জমে থাকা পানি থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

গত ৮ দিন থেকে বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে হবিগঞ্জের কয়েকটি উপজেলার কয়েক শতাধিক গ্রাম। ছবিটি হবিগঞ্জ জেলা সদরের সুলতান মোহাম্মদপুর থেকে তোলা। ছবি- মামুন হোসেন

জেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পানি নামার গতি খুব মন্থর। অনেক স্থানে পানি নামেনি। বন্যার স্থায়ীত্বে চরম ভোগন্তিতে পড়েছেন বানভাসি মানুষ।
দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পানি যেন এক জায়াগায় আটকে আছে। বাড়ছেও না কমছেও না। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঘরের ভেতর পানি। উদ্বাস্তু হয়ে আর কতদিন থাকা যায়।
বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকা একই এলাকার মাহবুব আলম বলেন, পানি সহজে কমছে না, খাবার মিলছে না। জীবন অসহায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে, গত ১৫ জুন থেকে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। দুদিন পর থেকে তা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। প্লাবিত হয় জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। বন্যাজনিত কারণে ১৭ মে থেকে এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৪৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাঁচ দিন ধরে ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করে, তবে সুরমা ও কুশিয়া নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা অববাহিকায় পানি বাডায় শুক্রবার পর্যন্ত জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আর বৃষ্টি না হলে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে পানি আরও কমে যাবে।