বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সর্বোত্তম

12

কবির আল মাহমুদ স্পেন থেকে :
বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোত্তম স্থান বলে মন্তব্য করেছেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সরওয়ার মাহমুদ। এ দেশে অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।
মঙ্গলবার (১৪ জুন ২০২২) মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে মাদ্রিদ চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রি এন্ড সার্ভিসেস এর যৌথ ব্যবস্থাপনায় নগরীর চেম্বার ভবনে ১ম অর্থনৈতিক কূটনৈতিক সপ্তাহের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আয়োজিত এক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় রাষ্ট্রদূত এ আহবান জানান। দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রেদোয়ান আহমেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন মাদ্রিদ চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট আগুস্তো কাস্তানিয়াদা।
স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ, এনডিসি স্পেন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করে আরো বলেন, স্পেন বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। স্বল্পোন্নত শ্রেণী থেকে উত্তরণের পর আজকের বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার অভীষ্ট লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। যা উন্নয়ন-অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ‘বিস্ময়ের এক বিস্ময়’। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জনে দূতাবাস দৃশ্যমান সাফল্য অর্জন করেছে। মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় রপ্তানিপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে দূতাবাস কর্তৃক গৃহীত বিবিধ কার্যক্রম স্পেনীয় উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ জাগিয়েছে।তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত পরিশ্রমী, বিনয়ী। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসব অঞ্চলে (অর্থনৈতিক জোনে) বিনিয়োগের মাধ্যমে খুব সহজেই লাভবান হতে পারেন। বিদেশিদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।
সেমিনারে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, স্পেনে বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের ৯৫ শতাংশই তৈরি-পোশাক। স্পেনে তৈরী পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক কূটনীতিকে আরও বেগবান করতে দূতাবাসের নানামুখী সৃজনশীল প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
সেমিনারে কি-নোট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (ইওউঅ) আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ অনুবিভাগের মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ মাহবুব। তিনি তার উপস্থাপনায়, আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অর্জিত বিস্ময়কর অগ্রগতি সব দেশের জন্যই এক প্রেরণাদায়ী উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশকে বলা হয় ঃযব ড়িৎষফ’ং ফৎবংংসধশবৎ। সমগ্র বিশ্বে আইটি ফ্রিল্যান্সার সরবরাহের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম, সবজি উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং মৎস্যসম্পদ উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম। দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মানদন্ডে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় (৭.২৫%)।
২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে (সূত্র: প্রাইস ওয়াটার ক্যুপারস)। জেপি মরগ্যান বাংলাদেশকে ড়হব ড়ভ ঃযব ভৎড়হঃরবৎ ৫ বপড়হড়সরবং হিসেবে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে প্রায় ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটির জনগোষ্ঠীর শতকরা ষাটভাগই তরুণ। অবকাঠামো উন্নয়ন, ভোক্তাব্যয় ও সার্ভিস সেক্টরে প্রবৃদ্ধি, বর্ধিষ্ণু নগরায়ন ও শিল্পায়ন এবং ডিজিটাল কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবিত অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল খাতসমূহের অন্যতম কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন, অটোমোবাইল মেনুফ্যাকচারিং, তথ্যপ্রযুক্তি ও ওড়ঞং, ব্লু ইকোনমি, স্বাস্থ্যসেবা, মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট ও ডিভাইস এবং পর্যটন ও হসপিটালিটি খাত। বাংলাদেশের ১০১টি ঊপড়হড়সরপ তড়হবং ও ৩৯টি হাই-টেক পার্কে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও সরকার ঘোষিত আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা গ্রহণের জন্য তিনি স্পেনীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সেমিনারে ঢাকা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইওউঅ’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো: সিরাজুল ইসলাম।