টি মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল

11

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বাংলাদেশ চা বোর্ডের অধীনে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২০০৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে “টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়াম” চালু হয়েছিল। চারিদিকে চা বাগান ঘেরা এই রিসোর্ট এন্ড টি মিউজিয়াম। যাহা পর্যটকের কাছে এখন বিশেষ আকর্ষণ টি মিউজিয়াম।টি মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল
টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়ামে দেশের চা শিল্পের প্রায় পৌণে দু’শ বছরের ইতিহাস ফুটে উঠেছে নানা সংগ্রহ স্মারকে। (১৯৫৭-৫৮) সালে চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিলও রয়েছে এই মিউজিয়ামে।
মিউজিয়ামে নির্যাতনের হাতিয়ার হাড়ের ছড়ি, অন্যদিকে শ্রমিকদের ব্যবহৃত নানান যন্ত্রপাতি।
টি মিউজিয়ামে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখে পড়লো বঙ্গবন্ধুর আপাদমস্তক প্রতিকৃতি। খালি চেয়ার-টেবিলের পেছনে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরিহিত বঙ্গবন্ধু ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। বিশাল ছবিটা দেখে মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান দায়িত্বপালনকালে গিয়েছিলেন নন্দরানী চা বাগানে। সে সময় তিনি যে চেয়ারে বসে মিটিং করেছিলেন সেই চেয়ার এটি। টেবিলও সেই মিটিংয়ের। আর সেই টেবিল-চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে এখনও যেন সব কিছু অবলোকন করছেন বঙ্গবন্ধু।
টেবিলে রাখা হয়েছে পরিদর্শন বই। তাতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের তথ্য জেনে।
টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়ামে চা-গাছ ব্যবহার করেই আসবাব তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোর ওপর প্রদর্শন করা হয়েছে এই কক্ষের সংগ্রহগুলো। চা-বাগানের আগাছা পরিষ্কার করার কাঁটা কোদাল, রিং কোদাল, তির-ধনুক, চা-গাছ ছাঁটাইকাজে ব্যবহৃত কলম দাসহ ব্রিটিশ আমলে শ্রমিকদের ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ার, আছে লোহার পাপস, চা-শ্রমিকদের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ রুপা ও তামার মুদ্রা। ব্রিটিশ সাহেবদের গুনতির কাজে ব্যবহৃত হাড়ের ছড়ি, লাঠি,শ্রমিকদের পূজা অর্চনায় ব্যবহৃত কষ্টিপাথরের পে¬ট, ব্যবস্থাপক বাংলোয় ব্যবহৃত প্রাচীন বেতারযন্ত্র, দেয়ালঘড়ি, চা-বাগানে চারা লাগানোর কাজে ব্যবহৃত বিশেষ যন্ত্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাউয়াছড়া বনে বিধ্বস্ত হয় একটি যুদ্ধবিমান। সেই যুদ্ধবিমানের অংশ বিশেষও স্থান করে নেয় এই মিউজিয়ামে। কাঠ দীর্ঘদিন মাটির নিচে থেকে পাথরে রূপান্তরিত চার খন্ড জীবাশ্ম ঠাঁই করে নিয়েছে কাচের ফ্রেমে। রয়েছে নেপচুন চা বাগান থেকে সংগৃহীত কেরোসিনের কুপি দিয়ে চালিত মাঝারি ফ্রিজ, মাথিউড়া চা বাগান থেকে প্রাপ্ত হাতে ঘোরানো টেলিফোন সেটও। ব্রিটিশ আমলের টারবাইন পাম্প, সার্ভে চেইন, হস্তচালিত নলকূপ, লিফট পাম্প, সিরামিকের পানির ফিল্টার, সিরামিক জার, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাচীন বৈদ্যুতিক পাখা, পুরনো রেডিও টেলিফোন সেট, প্রনিং দা, টাইপ রাইটার, প্রাচীন পিএইচ মিটার ও চা প্রসেসিং যন্ত্রপাতি।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. একে এম রফিকুল হক বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টায় বিভিন্ন বাগান থেকে এই স্মারকগুলো সংগ্রহ করেছি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন টি মিউজিয়ামে। চা শিল্পের ঐতিহ্য ও ইতিহাস বহনকারী এসব দূলর্ভ উপকরণ পর্যটকের কাছে বিশেষ কৌতুহলী করে তুলেছে।’