নগরী থেকে নামছে পানি, দুর্গন্ধ দূর করতে সিসিকের ব্লিচিং পাউডার ছিটানো শুরু

16

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর সড়কগুলো থেকে ড্রেনে পানি নেমে গেছে। তবে সুরমা নদীর পানি ধীরে ধীরে নেমে যাওয়ায় মহানগরীর ড্রেনের পানিও আস্তে আস্তে নামছে। এতে পানি নেমে যাওয়ায় ভেসে উঠেছে সেই সব চেনা সড়ক। এছাড়া পানি নেমে যাওয়া এলাকাগুলোতে সিলেট সিটি কপোরেশ দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর কাছ শুরু করছে।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর শাহজালাল উপশহর ও তালতলার প্রধান সড়কে গিয়ে দেখা যায়, একেবারে পানিহীন সড়ক। এই ভিআইপি সড়ক ও আবাসিক এলাকার অন্যান্য সড়কগুলো থেকেও পানি নেমে গেছে। তালতলা ফায়ার সার্ভিসের মতো দু’একটি নিচু এলাকা ছাড়া নগরীর বেশিরভাগ এলাকা থেকেই নেমে গেছে পানি।
মঙ্গলবার সকালে তালতলা এলাকায় গিয়েও দেখা যায়, পুরো পানিশূন্য সড়ক। এসব এলাকার বাসাবাড়ি থেকেও পানি নেমে গেছে। অথচ তালতলার অনেক এলাকায় দিন পাঁচেক আগেও কোমর পর্যন্ত পানি ছিল।
গত ১১ মে থেকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আর নগরীর কিছু এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করে ১৬ মে থেকে। ৮ দিন পর নগরী থেকে নামলো পানি।
এদিকে, ১৩ দিন পর সিলেটে সুরমা নদীর পানিও বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সুরমার পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার প্রায় ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সিলেট পয়েন্টে কমলেও কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি এখনও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও সবকটি পয়েন্টেই বিপদসীমার উপরে রয়েছে। এতে নগরীর পানি দ্রুত কমলেও গ্রামাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। জেলার ১২ টি উপজেলায় এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছে কয়েক লাখ মানুষ। পানি কমলেও দুর্ভোগ কমছে না নগরবাসীর। পানি নেমে যাওয়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। পানিতে অনেকের বাসাবাড়ির আসবাবপত্র ও দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর থেকেই এসব ঠিকঠাক ও ঘর পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছেন কয়েকদিন পানিবন্দি হয়ে থাকা মানুষ।
নগরীর জামতলা এলাকার বাসিন্দা ও সংস্কৃতি নেতা রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, ৭ দিন ঘরের ভেতরে পানি ছিল। এখন পানি নামলেও ঘরের ভেতর ড্রেনের ময়লার স্তুপ জমে আছে। দুর্গন্ধে ঘরের ভেতরে ঢুকা দায়। পুরো এলাকাজুড়েই দুর্গন্ধ। বেড়েছে মশার উৎপাত। তিনি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে পানি নেমে যাওয়া এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি পরিচ্ছন্ন করার দাবি জানান।
ঘাসিটুলা এলাকার বাসিন্দা বিমল রায় জানান, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তারা এখন নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করছেন। আসবাবপত্র ধোয়ামোছার কাজও চলছে। তবু দুর্গন্ধ কমছে না।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ২৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডই জলমগ্ন হয়ে পড়েছিলো। এখন দুএকটি এলাকা বাদে সব জায়গা থেকেই পানি নেমে গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং ময়লা দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, পানি নামার পর নিজেরদের বাসাবাড়ি নিজেরাই পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে যেতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুতই পুরো জেলার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
সিসিকের ব্লিচিং পাউডার ছিটানো শুরু: দুর্গন্ধ দূর করতে মহানগরীতে শুরু হয়েছে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর কাজ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মহানগরীর বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে দুর্গন্ধে দম বন্ধের উপক্রম। রাস্তাতো বটে, বাসাবাড়িতেও টেকা দায় হয়ে পড়েছে। ময়লা-আবর্জনা পঁচে এই দুর্গন্ধ। এই অস্বস্তি থেকে রক্ষায় গতকাল মঙ্গলবার থেকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছে নগর ভবন। আবর্জনা পরিষ্কারের পাশাপাশি ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে প্রতিটি বন্যা দুর্গত এলাকায় জীবানু ও দুর্গন্ধমুক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা হানিফুর রহমান জানান, আজ মঙ্গলবার ১০নং ওয়ার্ড এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি দুর্গন্ধের কারণে ছিটানো হচ্ছে ব্লিচিং পাউডার। আজ বুধবার নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকায় আরও বড় পরিসরে অভিযান চালানো হবে।