আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ॥ রাজনৈতিক দলগুলোতে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ, জোট ভাঙ্গতে ও নতুন জোট গড়তে পারে

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হিসাব-নিকাশ ও সমীকরণ শুরু হয়েছে। নতুন জোট গঠন, পুরনো জোটের নতুন কর্মকৌশল, মেরুকরণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে বাইরে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা।
আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে নতুন নতুন মেরুকরণ তৈরি হতে পারে। সেখানে জোট ভাঙা, নতুন জোট তৈরিসহ বিভিন্ন হিসাব ও সমীকরণ সামনে আসবে। বিশেষত বিএনপি নির্বাচনে এলে একরকম, না এলে আরেকরকম হবে। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বল ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়ে বিএনপি বার বার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও ক্ষমতাসীন সরকার ও আওয়ামী লীগ বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, গত ১৩ বছর ধরে বিএনপি আন্দোলনের কথা বললেও কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। তবে আন্দোলনের নামে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা হতে পারে বলে তারা মনে করেন। বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে দল গোছাতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি ১৪ দলকেও সক্রিয় করার কথা বলা হয়েছে। অস্থিতিশীল কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলও মাঠে নামাবে নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না। এ বিষয়ে বিএনপির গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন তারা। বিষয়টি স্পষ্ট হতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে তারা মনে করেন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করার পেছনের প্রেক্ষাপট ও কারণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল দলটি। পর পর দুটি নির্বাচন বর্জন করলে নিবাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এবার বিএনপির সেই ঝুঁকি নেই। তবে নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর মধ্যে হতাশা তৈরি হয় এবং তাদের দলে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কারণ অনুধাবন করে বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসতে পারে বলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
আগের দুটি নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনেও ১৪ দলগতভাবে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে বলে জোট শরিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর গত ১৫ মার্চ ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে জোটের প্রধান শেখ হাসিনা বৈঠক করে এ কথা জানিয়েছেন। বৈঠকে ১৪ দলকে সক্রিয় করার কথাও বলা হয়েছে। এরপর গত ৭ মে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় শেখ হাসিনা দলের নেতাদেরও বিষয়টি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আগামী নির্বাচনেও ১৪ দল জোটগতভাবে অংশ নেবে বলা হয়েছে। কিন্তু তার তো কোনো আলামত দেখছি না!
১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে এখনই কথা বলতে চাননি তিনি। আমির হোসেন আমু বলেন, এখন এ বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। এসব বিষয়ে পরে কথা বলা যাবে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা জানান, আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলই যাতে অংশ নেয়, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবে আওয়ামী লীগ। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেকগুলো দল অংশ নেয়নি। আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, আওয়ামী লীগ সে বিষয় চিন্তায় রেখেছে। গত ৭ মে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয় এবং বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নেতারা ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তবে ১৪ দলের অন্যান্য শরিক দল আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে ১৪ দলের বাইরে থাকা স্বাধীনতার পক্ষের বাম ও গণতান্ত্রিক দল নিয়ে একটি জোট গঠনের চেষ্টা করা হতে পারে। যে জোটটি নির্বাচনে দৃশ্যমান একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে।
অন্যদিকে ১৪ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ জাসদসহ কয়েকটি দল নিয়ে একটি নতুন জোটের তৎপরতা রয়েছে। এই নতুন জোটে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শরিক জাসদ (রব), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং এসব জোটের বাইরে থাকা প্রবীণ রাজনীতিবিদ পংকজ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন ঐক্য ন্যাপের থাকার কথা শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, আমরা নিজেরা একটা জোট গঠন নিয়ে কথা বলছি। চেষ্টা আছে, দেখা যাক কী হয়।
এই নতুন জোটে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান শরিক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির থাকা নিয়ে গুঞ্জন আছে। তবে সিপিবির নেতারা জানান, এ প্রক্রিয়ায় তাদের থাকার সম্ভাবনা নেই। কারণ নতুন জোটে যারা থাকবে তাদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট করা কয়েকটি দলও আছে। আবার এই নতুন জোট বৃহৎ পরিসরে ২০ দলের সঙ্গেও সমঝোতার চেষ্টা চালাতে পারে।
এ বিষয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সিপিবি বাম গণতান্ত্রিক জোটকে নিয়েই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ধারার বাইরে বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার এবং বর্তমান দুঃশাসনের অবসানের আন্দোলন করে যাচ্ছে। সিপিবি এই কাজ অব্যাহত রাখবে, আমরা অন্য কিছু চিন্তা করি না। এর বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করা বা কোনো জোট করা আমাদের এই বিকল্প শক্তি গড়ার কাজকে ব্যাহত করবে। অন্য কিছু চিন্তা করা মানে বাম গণতান্ত্রিক জোটকে ক্ষতিগ্রস্ত করা।