শান্তিগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা, চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে সময় ক্ষেপণ

7

শান্তিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জে জমি সংক্রান্ত জের ধরে দু-পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের আক্তাপাড়া মিনাবাজারে। ইতিমধ্যে কয়েকদফা সালিশ বৈঠক ও থানায় অভিযোগ দায়েরের পর অব শেষে দরগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান সুফি মিয়ার হস্তক্ষেপে ১৫ মে ২০২২ইং সালিশে বিরোধ নিষ্পত্তির কথা থাকলেও উপস্থিত হননি চেয়ারম্যান নিজেই। উপস্থিত লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং গ্রামে টানটান উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে বলে জানান একাধিক ব্যক্তিবর্গ।
রবিবার (১৫ মে) বিকালে সরেজমিন আক্তাপাড়া বাজারের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ভোক্তভোগী আক্তাপাড়া (রসুলপুর) গ্রামের মৃত মানিক মিয়ার ছেলে মো: এওয়ার মিয়ার পক্ষের লোকজন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বসে চেয়ারম্যান র’ অপেক্ষা করছে। এবং অনেকেই চেয়ারম্যান সুফি মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তিনি করোর ফোন রিসিভ করছেন না। পরে অনেকে সকাল থেকে অপেক্ষা করতে করতে বিকালে চেয়ারম্যান র ‘প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উপস্থিত সালিশ ব্যক্তিগণ চলে যেতে থাকে।
এ সময় উপস্থিত লন্ডন প্রবাসী হাজী আজিজ মিয়া মো. আব্দুর রশিদ, মাস্টার ইলিয়াছুর রহমান, জালাল মাহমুদ, ইমরুল কায়েস সহ অনেকে জানান, আজকের সালিশ বৈঠকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রদান ছিলেন, তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন আজকের বৈঠকে ফৌজদারি বিরোধটি সমাধান করে দিবেন। কিন্তু তিনি আসেননি, এবং আমাদের কারো ফোনই রিসিভ করছেন না। আমরা সকাল থেকেই বাজারের অফিসে বসে আছি। এলাকার সবাই চেয়ারম্যান প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যাচ্ছেন।
তবে এটাকে কেন্দ্র করে যেকোন সময়ই আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হতে পারে বলেও আশংকা করছেন এলাকাবাসি।
শান্তিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ১০ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখে একই গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আব্দুল মালিক সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে শান্তিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন আক্তাপাড়া (রসুলপুর) গ্রামের মৃত মানিক মিয়ার ছেলে মো: এওয়ার মিয়ার। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, শান্তিগঞ্জ থানাধীন দুর্গাপাশা মৌজার জেএল নং-৬৫, খতিয়ান নং-২৬১, দাগ নং-১১৭৭, পরিমাণ ১৯ শতক বাজারের ভিট রকম ভূমি বর্তমানে নির্মাণাধীন মার্কেটে অভিযোগকারী খরিদা সূত্রে মালিক থাকিয়া ভোগ দখলে আছেন। প্রতিপক্ষ আব্দুল মালিক সহ অন্যান্য বিবাদীগণ বিগত ১০ এপ্রিল হঠাৎ করে নির্মাণাধীন মার্কেটে জোর পূর্বক ভাংচুর ও নির্মাণের জন্য মজুদ করে রাখা প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা রড, সিমেন্ট ও কয়েল জোরপূর্বক গাড়ীতে উঠাইয়া নিয়ে যায়। এ বিষয়ে বাধা নিষেধ করতে চাইলে প্রতিপক্ষ অভিযোগকারীকে প্রাণে মারার ভয় দেখায়।
এ ব্যাপারে ভোক্তভোগী এওর মিয়া জানান, আমি আমার সম্পত্তি রক্ষা ও প্রাণ রক্ষার জন্য থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে ইউপি চেয়ারম্যান সুফি মিয়া, উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম, শান্তিগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই আলাউদ্দিন সহ এলকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিগত ১৪ এপ্রিল ২০২২ ইং বাজারের অফিসে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ আলোচনা শেষে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় অদ্য ১৫ মে ২০২২ ইং দরগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান সুফি মিয়া উভয় পক্ষের বিরোধটি নিষ্পত্তি করে দিবেন। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে সকাল ১০ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত আমাদের পক্ষের লোকজন উপস্থিত হলেও উপস্থিত হননি ইউপি চেয়ারম্যান সুফি মিয়া এবং অপর পক্ষের লোকজন। বার বার মোবাইল ফোনে সুফি মিয়াকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তিনি আরও বলেন চেয়ারম্যান এই কালক্ষেপণ করায় আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, যেকোন সময় আমার জায়গা বেদখল হওয়া সহ প্রতিপক্ষ কর্তৃক রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ ব্যাপারে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন এওয়ার মিয়া।
এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ ছালেহ আহমদ জানান, আমাদের উপর মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে এখানে আমাদের কোন জায়গা নাই আমাদের সংঘর্ষে যাওয়ার কোন যুক্তি নাই।
এ ব্যাপারে দরগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান সুফি মিয়ার সাথে মোবাইল ফোন যোগাযোগ কালে তিনি জানান, আমি কয়েকদিন ধরে ঢাকায় পরিকল্পনা মন্ত্রীর বাসায় আছি, এলাকার শালিস বৈঠক ছিলো, তবে পক্ষে বিপক্ষের কোন লোকজন আমার সাথে যোগাযোগ করেননি।
শান্তিগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই আলা উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনার পর বিষয়টি সালিশে নিষ্পত্তির জন্য ইউপি চেয়ারম্যান সহ এলাকাবাসী আশ্বাস দিলে অভিযোগের কার্যক্রম স্তগিত রাখা হয়।