তিতুনের ভাবনা

8

মিনহাজ উদ্দীন শরীফ :
ছোট্ট ছেলে তিতুন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বয়স সবে মাত্র নয় চলছে। ‘তিতুনের আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন’। আজ বাবারও অফিস বন্ধ। ‘তাই বাবা সকাল সকালই মায়ের তৈরি লিষ্ট নিয়ে বাজারে যাওয়ার জন্য’। রেডি হয়ে নাশতার টেবিল আসলো। তিতুনও যাবে বাবার সাথে তাই সেও রেডি হয়ে আসলো। তিতুন ও বাবা নাশতা খেয়ে মাকে টা টা দিয়ে, রিক্সায় চড়ে বাজারে গেলো।
বাবা মায়ের তৈরি লিষ্ট অনুসরণ করে সবকিছু ক্রয় করে। তারপর বাবা তিতুনকে নিয়ে মোহাম্মদী লাইব্রেরিতে গেলো। বাবা তিতুনের জন্য কলম, খাতা, রং পেন্সিল কার্ড বোর্ড ছড়ার বই এবং নিজের জন্য গল্পের বই কেনে। তিতুন খুব খুশি। কারণ তিতুন ছবি আঁকতে বেশ পছন্দ করে। কয়েকদিন আগে তিতুনের রংপেন্সিলের বাক্সটা হারিয়ে গিয়েছিল। তাই সে বেশ কয়েকদিন সাদাকালো ছবি এঁকে স্কুলের বন্ধুদের দেখিয়েছিল। আবারও কালারিং ছবি দেখাতে পারবে এইভেবে।
তারপর বাবা তিতুনকে নিয়ে গেলো শিশুপার্কে। সেখানে তিতুনের বয়সী শত শত বাচ্চারা অভিভাবক নিয়ে খেলা করছিল। ‘তিতুন বাবার সাথে নাগরদোলায় ও ঘোড়ায় উঠলো’। এই পার্কেরই একদিকে ছিলো ফুলের বাগান। সেখানে বাবা তিতুনকে নিয়ে যায়। তিতুন ও বাবা বাগানের ভেতর গিয়ে দেখে অনেক ফুল ফুটেছে। মৃদু বাতাসে ফুলগুলো হেলেদুলে নৃত্য করছে এমন মনে হচ্ছিল তিতুনের কাছে।
তিতুন এতো সুন্দর ফুল আগে কখনো দেখিনি!’তাই বাবাকে বললো’; বাবা এই ফুলের নাম কি? আর তারা কেনই-বা এভাবে সারাক্ষণ এক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে? এতে তাদের লাভ কি? ‘বাবা বলে তাহলে শোন’; ফুলের ইতিহাস—তিতুন শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেছে।
‘বাবা তিতুনকে বললো’; ‘এই ফুলের নাম গোলাপ যেটা তুমি ইংলিশে রোজ বলে জানো’। ‘ফুল ভালোবাসার ও শুভ্রতার প্রতীক’। ‘তারা তাদের সৌন্দর্যে ও সৌরভের জন্য পরিচিত’। ‘কিছু ফুল তাদের সৌরভ ও কিছু ফুল তাদের সৌন্দর্যের জন্য প্রসিদ্ধ’।’ কিন্তু গোলাপ তার বর্ণ ও সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বের সব মানুষের নিকট প্রিয়’। ‘তুমি কি জানো এর জন্ম কোথায়’? তিতুন বলে না তো বাবা স্কুলে তো আমাদের ম্যাডাম কিংবা স্যারে শেখায় নি। বাবা বললো ‘গোলাপের জন্ম প্যারিসে। ‘জাপানিরা এটি চাষাবাদের জন্য ব্যতিক্রমীভাবে বিখ্যাত’। বর্তমানে অধিকাংশ দেশে প্রচুর গোলাপ জন্মায়। এটি সাধারণ ‘জুন থেকে নভেম্বর মাসে লাগানো হয়’। এর সুগন্ধে আমাদের উৎফুল্ল করে তোলে। এটি ‘মানুষকে প্রাণবন্ত, সুন্দর, স্নেহশীল করে তুলে’।
‘তিতুন বাবাকে বললে’ বাবা তুমি এতো কিছু কি করে জানো? ‘বাবা অট্টহাসি হেসে বলে’ বোকা ছেলে, বোকার মতো প্রশ্ন করে। তিতুন এইগুলো তো বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিনে,পাঠ্যবইয়ে থাকে। সেখান থেকে জেনেছি। দেখোনি আজ যে বইগুলো ক্রয় করেছি সেইগুলো পড়েও নতুন কিছু জানবো! বুঝলে খোকা। তিতুন বলে তাহলে বাবা আমার বইয়ে এইগুলো নেই কেন? আমি যা জানি সেইগুলো তো তুমি অনেকে আগেই জেনে গেছো তাহলে আমি কিভাবে তোমাকে নতুন কিছু শোনাবো?
বাবা বলে তুমি যখন ধীরে ধীরে বড় ক্লাসে উঠবে তখন সব জানতে পারবে। আরেকটা কথা, ‘তুমি যা জানো, আমি তা জানি না’, আর ‘আমি যা জানি তুমি তা জানো না’। এটাই স্বাভাবিক। বড় হলে বুঝবে। এখন চলো বাড়ি। তোমার মা আবার রাগ করবে। তারপর বাবা ছেলে দু’জন বাসায় ফিরে যায়। তিতুন বাসায় প্রবেশ করেই মায়ের কাছে গোলাপের ইতিহাস বলে। মা বলে আমিও এইসব জানতাম না, আজ জেনে নিলাম। ‘আজ থেকে আমিও তোমার বাবার মতো বই পড়বো’। তারপর তোমাকে নতুন কিছু ইতিহাসের গল্প শোনাব। তিতুন বলে মা আজ থেকে আমিও বেশি বেশি বই পড়বো তারপর তোমাকে ও বাবাকে শোনাব গল্প বলে।