সিলেট হকার্স মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

7

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর লালদীঘিরপারের হকার্স মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে বেশ কিছু দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। গত সোমবার রাত ৩ টার দিকে হঠাৎ মার্কেটের ৫ নম্বর গলির একটি দোকান থেকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে পুরো মার্কেটটি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাত ৩ টার দিকে হঠাৎ মার্কেটের ৫ নম্বর গলির একটি দোকানে আগুন দেখা যায়। এরপর মুহূর্তের মধ্যেই আগুন আশপাশের দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। কিন্তু, মার্কেটের সরু গলি থাকায় ক্রমেই আগুনের পরিধি বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় সিলেটসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ১৭টি ইউনিটের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তার আগেই ৩, ৪ ও ৫ নং গলির দোকানগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা কয়েক কোটি টাকার পণ্য তুলেছিলেন। আগুনে সেসব পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদের আগের দিন ভয়াবহ এমন ঘটনায় ব্যবসায়ীরা চোখে অন্ধকার দেখছেন। ম্লান হয়ে গেছে তাদের ঈদ আনন্দ। অথচ ২ বছর পর এবার আসায় বুক বেঁধেছিলেন ব্যবসায়ীরা ।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মার্কেটের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গলির অসংখ্যা দোকান পুড়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় সব কটিই পোশাকের দোকান। মার্কেটটিতে পাইকারি দরে পোশাক বিক্রি হতো। খুচরা ব্যবসায়ী ও স্বল্প আয়ের মানুষের সবচেয়ে পছন্দের মার্কেট এটি। তাই ঈদে ঠিক আগের এমন ভয়াবহ আগুনে শুধু মার্কেট পুড়েনি, পুড়েছে তাদের হৃদয়ও-এমনটাই বলছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার সকাল ৬টার দিকে মার্কেটের ভেতরে এক পাশে বসে একজন মধ্যবয়স্ক ব্যবসায়ীকে কাঁদতে দেখা যায়। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, তাঁর বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে গেছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিনি একের পর এক দোকানগুলো পুড়ে যেতে দেখেছেন। কিন্তু তাঁর কিছুই করার ছিল না। দোকানগুলো পুড়ে যাওয়ায় তাঁর দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। অন্য আরো এক ব্যবসায়ী জানান, তাঁর একে একে ৭টি দোকান পুড়ে গেছে। তাঁর অবশিষ্ট আর কিছুই রইলনা বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। তাঁর মতো আরো অনেক ব্যবসায়ীকে এভাবে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অনবরত কাঁদতে দেখা যায়। কেউ কেউ বিলাপ করে বলছেন আমার সব শেষ। কেন এমন হলো।
এদিকে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ। এ সময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আগুন নেভাতে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে সহায়তা করছেন। তবে রাস্তা সরু থাকায় বেশ বেগ পেতে হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার বেলা ১টার দিকে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্বস্ব হারানো ব্যবসায়ীদের সান্তনা দেন। এছাড়াও দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করার জন্য সিলেট জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে সরকার। সবটুকু না হলেও যথাসাধ্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, ভয়াবহ আগুন লাগার পরে আমাদের ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যেভাবে তাদের জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন সেটি অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। এছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আগুন লাগার খবর পেয়েই ছুটে এসে যে ভূমিকা রেখেছেন সেটি প্রশসংনীয়।
এসময় পাশে থাকা সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমানকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি ও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরুপণ করার নির্দেশ প্রদান করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি প্রবেশের সুবিধার্থে হকার্স মার্কেটের গলিগুলো বড় করার নির্দেশন দেন মন্ত্রী।