রায় দ্রুত কার্যকর

4

বর্তমান বাংলাদেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে বলেই চাঞ্চল্যকর সব হত্যা মামলারই ন্যায়বিচার সম্পন্ন হচ্ছে। এর সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত লেখক, ভাষাবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা। এটি ঠিক যে, বিচার সম্পন্ন হয়ে রায় প্রাপ্তিতে আঠারোটি বছর লেগেছে। তবু শেষ পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক রায় পাওয়া দেশে বিচার প্রাপ্তির সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত। রায়ে বিজ্ঞ আদালত চার আসামির মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন। এরা প্রত্যেকেই কট্টর মৌলবাদী জঙ্গী দল জেএমবির সদস্য।
একাত্তরে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল তাদের প্রভু পাকিস্তানের চূড়ান্ত পরাজয়ের আগে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। স্বাধীন দেশেও যে তাদের উত্তরসূরিরা আবার বুদ্ধিজীবী ও মুক্তমনা লেখক-ব্লগারদের হত্যা করবে, এমনটি ছিল কল্পনাতীত। প্রবল পরিতাপের বিষয় হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অভিপ্রায়ে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করে এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করা উগ্র গোষ্ঠী সংঘবদ্ধ হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা চলে। দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নষ্ট করার জন্য এবং ধর্মান্ধতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আসামিরা নৃশংসভাবে হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়েছিল। ফাঁসির রায়ে সন্তুষ্টি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। ড. হুমায়ুন আজাদের বড় মেয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তার বাবার হত্যার রায় নিয়ে পরিবারের সবার মধ্যে একটা দ্বিধা ছিল যে আসলে বিচার হবে কিনা। বিচার হওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। তবে মামলার বাদী হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই কিছুটা অতৃপ্তি প্রকাশ করে বলেছেন, যে জামায়াত নেতা জাতীয় সংসদে ড. আজাদের বই নিষিদ্ধ করার কথা বলেছিল এবং তার ভাই নিজেই যে জামায়াত নেতাকে তার ওপর হামলার জন্য দায়ী করে গেছেন সেই দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে মামলায় আসামি করা হয়নি।
বিচারের রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের দুজন কারাগারে থাকলেও বাকি দুজন পলাতক। জাতির প্রত্যাশা পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে। বিচারের রায় পেতে ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন চলে গেছে, তাই রায় যত দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব হবে ততই মঙ্গল।