রমজানে পণ্যমূল্য ছাড়

7

নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সময়ের সদ্ব্যবহার করেন। হোক তা মানুষের সঙ্কট কিংবা ভাল সময়। সুযোগ তাদের কাজে লাগাতেই হবে। অনেক সময় কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেও তারা অর্থ আয়ের পথ তৈরি করেন। বিভিন্ন ব্যবসায় আলোচিত সিন্ডিকেট এর বাস্তব উদাহরণ। আর্থ-সামাজিক বিপর্যয়ে তারা মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে নানা অপকৌশল প্রয়োগ করেন। উৎসব পার্বণে তাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় বহুগুণ। পবিত্র রমজান মাসে বিশে^র সকল মুসলিম রাষ্ট্রে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সিয়াম সাধনা সহজ করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন ব্যবসায়ীরা। রমজানে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্যের মূল্যছাড় ঘোষণা করেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী কাতারে রমজান মাস উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা ৮শ’র বেশি পণ্যের দাম কমিয়েছেন। পণ্যের দামে প্রায় ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে এক সপ্তাহের মেলা শুরু করেছে মিসর। প্রতিবেশী দেশ মালদ্বীপও রমজান উপলক্ষে পণ্যভেদে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, মালয়েশিয়ায় সারা রমজান মানুষ কম দামে পণ্য ক্রয় করার সুযোগ পান। মুসলিম দেশগুলোর বাইরেও রমজানের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে মূল্য ছাড় দিয়ে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইউরোপ এবং আমেরিকা। মুসলিমদের জন্য এই সময় বিভিন্ন কার্ডের মাধ্যমে পণ্যমূল্যে ছাড় দেয়া হয়। বাংলাদেশের চিত্র ঠিক উল্টো। পণ্যের দাম কমানো তো দূরের কথা, রমজান শুরুর কয়েক মাস আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জিম্মি করার নানা কৌশল অবলম্বন শুরু করেন। এমনকি পণ্যে ভেজাল পর্যন্ত মেশানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা হলেও কার্যত তেমন ফল পাওয়া যায় না।
রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়া খুব স্পষ্ট। সংবাদ মাধ্যমে প্রতিদিন এসব প্রক্রিয়া চিহ্নিত করে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। ঢাকা থেকে দেড়-দুই ঘণ্টার রাস্তা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় রমজানের আগের দিন বেগুনের মূল্য ছিল প্রতি কেজি ২০ টাকা। এই বেগুন ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা। দেড় ঘণ্টার পথে কি এমন হয়েছে যে, কেজি প্রতি বেগুনের দাম এক শ’ টাকা বেড়ে গেছে! ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাঁদাবাজির কারণে তাদের দাম বাড়াতে হয়। নরসিংদী থেকে একটি ট্রাকে ৫ হাজার কেজি (পাঁচ টন) বেগুন ঢাকায় আসতে কি তাহলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়? এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া নানা ঘটনায় এটি স্পষ্ট, ব্যবসায়ীদের কাছে নীতি নৈতিকতা প্রত্যাশা করে লাভ নেই। এজন্য সরকারকেই আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এর কোন বিকল্প নেই।